রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ফ্রান্স-মরক্কো সেমিফাইনাল

ফ্রান্স-মরক্কো সেমিফাইনাল

ইতিহাস গড়ে পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে উঠেছে মরক্কো

৮৫ মিনিটে পেনাল্টি মিস করেন হ্যারি কেইন। ওই মিসেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে ১৯৬৬ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। অথচ ৫৩ মিনিটে দুরন্ত এক পেনাল্টিতে ম্যাচে সমতা এনেছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক কেইন। পেনাল্টি মিসের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ১৭ মিনিটে ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের এগিয়ে নেন চুয়ামেনি ১০৮ কিলোমিটার গতির দুরন্ত শটে। ৭৮ মিনিটে ফ্রান্সের জয়সূচক গোলটি করেন অলিভার জিরদ। আসরে এটা তার চতুর্থ গোল। ৫ গোল করে সবার ওপরে স্বদেশি কিলিয়ান এমবাপ্পে। লিওনেল মেসির গোল ৪টি। দিনের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কো ১-০ গোলে পর্তুগালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। ১৪ ডিসেম্বর প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া এবং ১৫ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ মরক্কো। ফাইনাল ১৮ ডিসেম্বর। এদিকে, আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে মরক্কোর দুই পাগল সমর্থক এসেছিলেন। একজনের গায়ে মরক্কোর পতাকা জড়ানো। অন্যজনের গায়ে আর্জেন্টিনার। সংবাদকর্মীদের সামনে এসে বারবার তারা বলছিলেন, আর্জেন্টিনা-মরক্কো ফাইনাল। তাদের দাবি পূরণ হবে কি না বলা কঠিন। তবে ইতিহাস গড়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা মরক্কোর পক্ষে এবার            যে-কোনো ঘটনা ঘটানোই সম্ভব! গতকাল কাতারের রাজধানী দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়েছে মরক্কো। এতেই গড়েছে এক দারুণ ইতিহাস। আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল দলটা। আফ্রিকার তিনটি দেশ এর আগে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। ক্যামেরুন খেলেছে ১৯৯০ সালে। সেবার তারা ইংল্যান্ডের কাছে ৩-২ গোলে হেরে যায় কোয়ার্টারে। ২০০২ সালে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে সেনেগাল। সেবার তারা ১-০ গোলে হেরে যায় তুরস্কের কাছে। ২০১০ সালে ঘানার খুব ভালো সম্ভাবনা ছিল সেমিফাইনাল খেলার। শেষ মুহূর্তে ঘানার একটা নিশ্চিত গোল হাত দিয়ে সেভ করে লাল কার্ড দেখেন উরুগুয়ের তারকা ফুটবলার লুইস সুয়ারেজ। তবে তার দল সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। এবারে আর কোনো ভুল করল না আফ্রিকানরা। ইতিহাস গড়েই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল মরক্কো। ম্যাচের ৪২তম মিনিটে ইয়াহিয়ার অ্যাসিস্টে মরক্কোর পক্ষে গোলটা করেন ইউসেফ এন-নেসারি। এতেই জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় মরক্কোর! পর্তুগালের একটা বাজে রেকর্ড আছে। বিশ্বকাপে প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়া আগের ছয়টা ম্যাচে পর্তুগিজরা জয়ের মুখ দেখেনি। গতকাল প্রথমার্ধে পিছিয়ে যাওয়ার পরই রোনালদোদের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়! মরক্কো থেকে হাজার হাজার দর্শক আসছেন কাতারে। দেশটির সরকারই সমর্থকদের আসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বিমানের ভাড়া কমিয়ে দিয়েছে অর্ধেক।

 মাত্র ৫০০ ডলারেই তারা সাড়ে সাত ঘণ্টার ফ্লাইট ধরে পৌঁছে যায় দোহায়। অনেকের কাছেই টিকিট নেই। তারা ফিফা ফ্যান জোনে গিয়ে নিজ দলকে সমর্থন জোগায়। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে সেরা অর্জনের পর এবার মরক্কোর সামনে কঠিন বাধা। সেমিফাইনালে তাদের খেলতে হবে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড অথবা ফ্রান্সের সঙ্গে। গত রাতেই কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছে ফ্রান্স-ইংল্যান্ড। যে দলই শেষ চারে আসুক, মরক্কোর কাজ সহজ হবে না। তবে যারা বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে স্পেন ও পর্তুগালের মতো দলকে হারিয়েছে, যারা গ্রুপ পর্বে বেলজিয়ামকে হারিয়েছে তাদের পক্ষে যে-কোনো কিছুই সম্ভব! মরক্কোর এ ফুটবল বিপ্লব পুরো আরব অঞ্চলকে দারুণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। আরব ও আফ্রিকানরা উৎসব করছে। এমনকি মরক্কোর রাজা চতুর্থ মুহাম্মদও ভক্তদের সঙ্গে উৎসবে যোগ দিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর