রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা করল আওয়ামী লীগ

জাতীয় সম্মেলনের বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের বাজেট পাস করা হয়েছে। এবারের সম্মেলনে খরচ হবে ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। একই সঙ্গে জাতীয় সম্মেলনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিগত দিনে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে। গতকাল রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বৈঠকে অধিকাংশ জাতীয় পরিষদের সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়েছে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে। সদস্য করা হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের আরও দুই সদস্য ড. মসিউর রহমান খান ও সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে। জানা গেছে, ২১তম জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি টাকা। এবার বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অত্যন্ত সাদামাটা ও সংক্ষিপ্ত পরিসরে করার জন্য খরচ কমিয়ে আনা হয়েছে। সে কারণে ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা খরচ নির্ধারণ করে জাতীয় কমিটির বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের বৈঠকে যারা বিভিন্ন সাংগঠনিক অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেছেন তাদের বিষয়টিও তোলা হয়। তাদের মধ্যে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী হয়ে যারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে যারা দলের হাইকমান্ডে ক্ষমা চেয়েছেন, তাদের সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে। একই সঙ্গে যারা বাকি আছেন, তারা যদি ক্ষমা চান তাদের বিষয়টিও বিবেচনায় নেবে আওয়ামী লীগ। সূত্র জানায়, এ প্রসঙ্গে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন নিয়ে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যাতে কোনো শক্তিই পরাজিত করতে না পারে। বিগত দিনে যারা দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ড করেছেন, তাদের সাধারণ ক্ষমা করা হলো। তবে ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় সেজন্য সতর্ক করা হলো। একবার ক্ষমা করব বলেই বারবার একই কাজ করব তা কিন্তু নয়। দলীয় সূত্র জানায়, বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা করা হলেও তারা দলের স্বপদে ফিরতে পারবেন না। তারা সাধারণ সদস্য হয়ে থাকবেন। তবে ভবিষ্যতে তারা দলের যে কোনো পদ-পদবিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। দলের গঠনতন্ত্রের ১৭ (ক) ধারায় বলা আছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি জাতীয় কমিটি থাকিবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা হইতে একজন করিয়া সদস্য স্ব স্ব জেলা ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল কর্তৃক জাতীয় কমিটিতে নির্বাচিত হইবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মকর্তা, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কর্তৃক মনোনীত ২১ জন সদস্য এবং উপযুক্তভাবে নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যবৃন্দকে লইয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি গঠিত হইবে। জাতীয় কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা হইবে ১৮০ জন, যার মধ্যে ৮১ জন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, ৭৮ জন সাংগঠনিক জেলা প্রতিনিধি এবং ২১ জন সভাপতি কর্তৃক মনোনীত।’

এদিকে গত রাতে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীসহ দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত শতাধিক নেতা-কর্মীকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা আওয়ামী লীগের।

তিনি বলেন, জাতীয় কমিটি দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী, দলীয় কোন্দল সৃষ্টিকারী শতাধিক আবেদন গ্রহণ করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য এবারের সম্মেলনের বাজেট ৩০ লাখ টাকা কমিয়ে ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা জাতীয় কমিটি নির্ধারণ করেছে।

দলীয় সূত্র জানান, দলের প্রচার ও প্রকাশনায় খরচ ধরা হয়েছে ২৪ লাখ, দফতরে খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামের জন্য ১০ লাখ, খাদ্যে ১ কোটি ৫৪ লাখ, ম- ও সাজসজ্জার জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

সর্বশেষ খবর