বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইভিএম বিড়ম্বনা রংপুরে

নজরুল মৃধা, রংপুর

ইভিএম বিড়ম্বনা রংপুরে

হাতের ছাপ মেলানো নিয়ে গতকাল ভোগান্তিতে পড়েন ভোটাররা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শীতের সকালে কুয়াশার মধ্যে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তবে সময়মতো কেন্দ্রে এলেও ইভিএমে ভোটদান ও আঙুলের ছাপ মেলানো নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন ভোটাররা। ভোটদানের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিয়ে ফিরে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।

এদিকে আঙুলের ছাপ মেলাতে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের সামনে রাখা ছিল লেবু, টিস্যু ও ভ্যাসলিন। তার পরও ইভিএমে আঙুলের ছাপ মেলাতে হিমশিম খেতে হয় কর্মকর্তাদের। ছাপ না মেলায় কর্মকর্তারা কাউকে হাত ধুয়ে আসতে বলেন, কাউকে লেবু ঘষে আসার পরামর্শ দেন। অনেক সময় আঙুলের ছাপ মেলাতে ভোটারের হাতে ভ্যাসলিন ঘষেও কাজ হয়নি। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের আঙুলের ছাপ মেলেনি অনেক কেন্দ্রেই। ইভিএমে ভোটদান নিয়ে দিনভর অসন্তোষ ছিল ভোটারের মাধ্যমে। ইভিএমের ধীরগতিতে বিরক্ত ছিলেন ভোটাররা। তবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারের উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি ছিল না। পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এমন চিত্র ছিল গতকাল রংপুর সিটি নির্বাচনে।

এদিকে ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণ হলেও একটি কেন্দ্রে ফল ঘোষণার পর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর প্রার্থী এক যুবলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। মহানগরীর আমাশু প্রগতি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে এ সংঘর্ষের সময় বিজিবির একটি টহল গাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সিটিতে সকাল সাড়ে ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়, সাড়ে ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের পর অন্তত ৩০ কেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ লাইন ছিল। রাত ৮টা পর্যন্ত অনেক কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলেছে। ভোট গ্রহণের গতি বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা বলেছেন, ইভিএম মেশিনে আঙুলের ছাপ মেলাতেই বেশি সময় চলে গেছে। গোপন কক্ষে ইভিএমে ভোট দিতে ভোটাররা সময় বেশি নিয়েছেন। ইভিএমে আঙুলের ছাপ মেলাতে বেগ পেতে হয়েছে। অনেক বয়স্ক ব্যক্তি, খেটে খাওয়া মানুষের ছাপ মেলেনি। এদিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ইভিএমের ‘ত্রুটি’ এবং ভোট গ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ করেছেন। ইভিএম জটিলতায় তাঁর নিজেরও ভোট দিতে আধা ঘণ্টা দেরি হয়েছে। জাপা প্রার্থীর অভিযোগ ‘অসত্য নয়’ মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘ব্যালট পেপারের প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ইভিএমের ভোটে কিছুটা ধীরগতি হবেই।’

আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বিকাল সাড়ে ৪টার পর সিইসি বলেন, ‘রংপুর সিটি নির্বাচন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি ব্যাপক ছিল, স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। সাড়ে ৪টার মধ্যে ভোট শেষ হয়েছে। ধীরগতির অভিযোগ অসত্য নয়। এখন যে অবস্থা দেখছি অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এটা শেষ করতে ৭টা-৮টা পর্যন্ত গড়িয়ে যেতে পারে।’ দুই কারণে এ ধীরগতি বলে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘রংপুর সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি হওয়া এবং অনেকের আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট গ্রহণে ধীরগতি হয়েছে। অ্যাভারেজ অনুমান করছি ৫০-৫৫% এবং পরিশেষ ৬০%-এর ওপরে বা কমও হতে পারে।’

এদিকে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা সিসি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। পরে ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমানকে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। ইভিএমে ভোট নিয়ে ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে সিইসি বলেছেন, ‘রংপুরে অস্বাভাবিক বিলম্ব হয়েছে কি না তা মূল্যায়ন করে দেখা হবে। তবে উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রের চৌহদ্দিতে থাকা ভোটারদের ভোট শেষ করতে কয়েকটা ঘণ্টা লেগে যেতে পারে।’ আঙুলের ছাপ না মেলায় নাকি অন্য কারণে ধীরগতি, এ প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, ‘অভিযোগটা আসছে স্লো, এটা অসত্য নয়। শুধু আঙুলের ছাপের বিষয় নয়, আঙুলের ছাপ না মেলার অন্যতম কারণ; যেজন্য দেরি হয়ে যায়, একজনের জন্য আরেকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এ সময়; আমরা বলেছি এ সময় একজনকে সরিয়ে দিয়ে পরের জনকে এগিয়ে দিতে।’

সরেজমিন দেখা গেছে, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্র এবং রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং অফিসারদের সামনে টিস্যু ও ভ্যাসলিন রাখা ছিল। জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ে আঙুলের ছাপ মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। কাউকে হাত ধুয়ে আসতে বলছেন, কাউকে লেবু ঘষে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ সময় জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ভোট গ্রহণের গতি কিছুটা কম। ইভিএমে আঙুলের ছাপ মেলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। বয়স্ক ব্যক্তি, খেটে খাওয়া লোকজনের ছাপ মিলছে না। সরেজমিন দেখা গেছে, ধীরগতি ও ত্রুটির কারণে কমপক্ষে ৩০ কেন্দ্রে সময়মতো বিকাল সাড়ে ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ করতে পারেননি কর্মকর্তারা। ওইসব কেন্দ্রে রাত পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। নগরীর মেট্রোপলিটন স্কুল, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আশরতপুর বালিকা বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত থাকায় নির্ধারিত সময়ে ভোট শেষ করতে পারা যায়নি। ওইসব কেন্দ্রে ভোটাররা রাতেও ভোট দেন। সকালে নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি ভোটকক্ষে ১০ মিনিট অবস্থানের পর বাইরে এসে ভোট দিতে না পেরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় মোস্তফা বলেন, ‘আমরা আগেই আশঙ্কা করছিলাম এই ইভিএম নিয়ে। অবশেষে সেটাই সত্য হলো। ভোট দিতে গিয়ে ইভিএম বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণে ভোট দেওয়া সম্ভব হয়নি।’ ভোট কেন্দ্রে কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন প্রার্থী হয়েও ভোট দিতে পারলাম না, যা খুবই দুঃখজনক।’ তবে তিনি প্রায় আধা ঘণ্টা পরে ভোট প্রদান করেন। এদিকে লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে মোস্তফার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, ‘ইভিএমের ত্রুটির কারণে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রথম দফায় ভোট দিতে পারেননি, এমন অভিযোগ জানার পর প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে ইভিএমের কোনো ত্রুটি ছিল না। একজন ভোটার ভোট দিচ্ছিলেন। তাঁকে একটু অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা না করে ইভিএম এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। ইভিএমের কোনো ত্রুটি ছিল না।’ তবে তিনি আরও বলেন, ‘কিছু ভোটারের হাতের আঙুল পরিষ্কার না থাকায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছিল না। তাদের হাত পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো কোনো কারণে ভোটদানে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লেগেছে। অনেকের আঙুলের ছাপ মেলেনি।’

এদিকে বিকাল ৩টার দিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান অভিযোগ করেছেন, অনেক কেন্দ্রে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ভোটাররা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও ভোট দিতে না পেরে অনেকে ফিরে গেছেন। গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মৌখিকভাবে এসব অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন উপস্থিত ছিলেন না। রিটার্নিং অফিসারের স্টাফ অফিসারে কাছে তিনি অভিযোগ দেন। পরে কার্যালয় থেকে বের হয়ে জাপা প্রার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম ইভিএমে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদান করতে পারবেন ভোটাররা। কিন্তু সকালে যখন কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলাম তখন জানতে পারলাম ইভিএমে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলে আসছে না। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন কিছুটা সমস্যা হওয়ার কারণে দীর্ঘ সারি হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে আটটি বুথ আছে, সেখানে দুটি বুথে সমস্যা।’ পরে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, ‘কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট দিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এ সিস্টেম (ইভিএম) বয়স্ক ভোটারদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ায় এমনটি হয়েছে।’ এদিকে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে। রংপুরের মানুষ নৌকার সঙ্গে আছে। উন্নয়নের স্বার্থে বিপুল ভোটে নৌকাকে বিজয়ী করবেন।’

অন্যদিকে নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার মনিরা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, ধীরগতির কারণে ভোট দিতে অনেক বিলম্ব হয়েছে। অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে দেরির কারণে ভোট না দিয়ে চলে গেছেন। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোটার আলী হোসেনও ধীরগতি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ধীরগতির কারণে অনেকে ভোট না দিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। খটখটিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় ৯০ বছর বয়সী সন্ধ্যারানীর সঙ্গে। গীতগতি হলেও তিনি ইভিএম যন্ত্রে ভোট দিতে পেরে খুশি। কাচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে দেখা গেছে ভোটারের উপস্থিতি ব্যাপক। তবে ইভিএমের ধীরগতির কারণে সবাই বিরক্ত। অনেককেই বলতে শোনা গেছে ইভিএমের চেয়ে ব্যালটের ভোট হাজার গুণ ভালো। ইভিএম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় অনেকের ভোট বাতিলও হয়েছে। এদিকে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে, অনেকে ইভিএমে ভোট দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু সঠিকভাবে সুইচ টিপতে পারেননি। ফলে তাদের ভোট বাতিল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনে নয়জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৬৮ ও সাধারণ কাউন্সিলর ১৮৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। ৯ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্বাচনে ২২৯টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৪৯টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটার ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। মেয়র পদে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র লতিফুর রহমান মিলন, ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মন্ডল, জাসদের শফিয়ার রহমান, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম ও স্বতন্ত্র মেহেদী হাসান বনি।

রংপুরে বিজিবির গাড়িতে আগুন, কাউন্সিলর প্রার্থী আটক : রংপুর সিটি নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে ফল ঘোষণার পর সংঘর্ষের সময় বিজিবির টহল মাইক্রোবাসে আগুন দিয়েছেন পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা। এ ঘটনায় হারাধন হারা নামে কাউন্সিলর প্রার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। গত রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে তাকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহানগরীর আমাশু প্রগতি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে বিজিবির একটি টহল মাইক্রোবাসে আগুন দেন পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আমাশু প্রগতি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষ করে চলে যায় প্রশাসন। ওই কেন্দ্রে রফিকুল ইসলাম নামে এক কমিশনার প্রার্থী প্রথম হন। কিছুক্ষণ পর খবর আসে রফিকুল হেরে গেছেন। এ খবরে সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় ওই পথেই যাচ্ছিল বিজিবির একটি টহল গাড়ি। বিশৃঙ্খলার সুযোগে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা পরে গাড়িটির ওপর চড়াও হন। ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোবাসের চালক ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমার গাড়িতে বিজিবি সদস্যরা ছিলেন। আমি গাড়ি নিয়ে আসামাত্রই কয়েকজন হামলা চালায়। পেছনে থাকা প্রশাসনের গাড়ি ঘুরিয়ে যেতে পারলেও আমি যেতে পারিনি। তারা আমার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অনেকে আহত হয়েছেন।’ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানান, দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় রিকুইজিশন নেওয়া বিজিবির একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর তৎক্ষণাৎ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় হারাধন নামে এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর