বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল, পুলিশকে জানাল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বিএনপির গণমিছিল নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট রুটেই শুরু হবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, গণমিছিল যেন পছন্দের রুটেই করতে পারি সে ব্যাপারে আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আশ্বাস বা নিরাশার কোনো বিষয় না। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির সদর দফতরে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার। প্রায় ঘণ্টাখানেক বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ডিএমপি কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির ১০ দফা দাবিতে প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল। এটা শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে করার জন্য গণমিছিলের রুট নিয়ে ডিএমপির সঙ্গে আলোচনা হয়। তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। গণমিছিল সফল ও সার্থক করা এখন বিএনপির মূল উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যেই আমরা এখন এগিয়ে যাচ্ছি। গণমিছিল নয়াপল্টন থেকেই শুরু হবে।

বিশৃঙ্খলা না করার শর্তে অনুমতি : আগামী ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল করার জন্য বিএনপিকে অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকালে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করলে এ অনুমতি দেওয়া হয়। তবে গণমিছিল করার জন্য বিএনপিকে রুট নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ডিএমপি। একই সঙ্গে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করার শর্তও পুলিশের পক্ষ থেকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি সদর দফতরে এসেছিলেন আমাদের সঙ্গে বৈঠক করতে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর তারা তাদের পূর্বঘোষিত দলীয় কর্মসূচি গণমিছিল করতে চান। আমরা সার্বিক বিবেচনায় নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয় থেকে মগবাজার পর্যন্ত গণমিছিল করার অনুমতি দিয়েছি।

গণমিছিলকে ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতার আশঙ্কা দেখছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, বিএনপির দলীয় গণমিছিল কর্মসূচি উপলক্ষে আমাদের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। আমরা বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতার আশঙ্কা করছি না, তারা (বিএনপি) আমাদের সুশৃঙ্খল গণমিছিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরপরও যদি কেউ বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে বা করা হয় তাহলে প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার।

জোট নেতাদের নিয়ে বৈঠক : চলমান আন্দোলনের পরবর্তী করণীয় নিয়ে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বিএনপি। বৈঠকে বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও মো. আবদুল আউয়াল মিন্টু। গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ এলডিপির (বিএলডিপি) শাহাদাত হোসেন সেলিম, মুসলিম লীগের (বিএমএল) শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় দলের রফিকুল ইসলাম, জাগপার ইকবাল হোসেন, এনডিপির আবদুল্লাহ আল হারুন সোহেল ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম প্রমুখ। জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আমাদের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতারা কথা বলেছেন।

তারা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত নিয়েছেন। বিশেষত শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। এদিকে সন্ধ্যায় সমমনা আরও সাত দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছে বিএনপি। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান রহমান মোস্তফা, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ ভাসানী, পিপলস লীগের প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির নেতারা। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনসহ ১০ দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ১০ দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গত শনিবার ঢাকা ও রংপুর মহানগর বাদে সারা দেশে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে গণমিছিল করেছে বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।

সর্বশেষ খবর