মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনে মনোনয়নপত্র কিনলেন যারা

প্রতিদিন ডেস্ক

বিএনপির ছেড়ে দেওয়া সাতটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র কেনা শুরু করেছেন। এ উপলক্ষে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের পদচারণে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকা সরগরম হয়ে উঠেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা সংসদীয় এলাকাগুলো থেকে বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে উপনির্বাচন। ১৯৭৩ সালের পর থেকে এই আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী এমপি হননি। কখনো মহাজোট আবার কখনো বিএনপি প্রার্থীর দখলেই ছিল গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। তবে গত ১১ ডিসেম্বর বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদ থেকে তিনি পদত্যাগ করায় শূন্য হয় আসনটি।

এরপর থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে এ আসনের নির্বাচনী মাঠ। উপনির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নামেন আওয়ামী লীগের অন্তত এক ডজনেরও অধিক প্রার্থী। অন্যদিকে জাতীয় পার্টিরও একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তবে গত রবিবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ আসনটিকে উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়। সাধারণ মানুষ মনে করছেন উন্মুক্ত হওয়ায় প্রার্থীরা নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী ভোট পাবেন। তবে বর্তমানে নির্বাচন ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুুস সাত্তার ভূঁইয়া। তিনি জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করার পর বিএনপির সব পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। এই আসনেই ফের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্রও কিনেছেন তিনি।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি বলেন, ‘তিনি যখন দলে ছিলেন তখন ওনাকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনীতিতে জীবন-যৌবন শেষ করে শেষ বয়সে দলত্যাগী হওয়া কোনো আদর্শিক কাজ হতে পারে না। তবে তার জন্য বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না।’

পদত্যাগ করা সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তারকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। রবিবার রাতে দলটির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে তাকে অব্যাহতিপূর্বক বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ নির্বাচনের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি মঈন উদ্দিন মঈন বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি নিশ্চিত বিজয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছিলাম। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি প্রস্তুত রয়েছি। ১৯৭৫-এর পর থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় এলাকাটি অবহেলিত রয়ে গেছে। জনগণের আক্ষেপ ঘোচাতে এ আসনটি পুনরুদ্ধার করে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন ধারার অংশ হিসেবে সরাইল-আশুগঞ্জ উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই।’ 

জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘আসনটি উন্মুক্ত ঘোষণা করায় ভালো হয়েছে। এখন প্রার্থীরা যার যার যোগ্যতায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলগত কোনো প্রার্থী থাকবে না।’ জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব নাসির আহম্মেদ খান বলেন, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকছে না। তাই জাতীয় পার্টি থেকেও দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়া হবে কি না- এ বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে।’

জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, গতকাল পর্যন্ত ১২ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি। গতকাল দুপুরে আশুগঞ্জ বাজারের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উপজেলা বিএনপির এক জরুরি সভায় এ ঘোষণা  দেওয়া হয়। এ বিষয়ে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মাইনুল হাসান তুষার বলেন, ‘নির্বাচনে বাবার (আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া) অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আর দল থেকে বহিষ্কার ও অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়টি বিএনপির একান্ত দলীয় বিষয়।’

বগুড়া : বগুড়ার দুটি আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন মো. আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। গতকাল বেলা ১২টায় বগুড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানের কাছ থেকে হিরো আলম মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া দুটি আসন মিলিয়ে মোট ১৬ প্রার্থী তাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করার পর বগুড়ার এ দুটি আসন শূন্য হয়। আসন দুটি হলো বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর)। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়ার দুটি আসনেই উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। উপনির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে হয়- এমনটা প্রত্যাশা করছি।

এই উপনির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে আরও মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, জেলা জাপার সদস্য সচিব নূরুল ইসলাম ওমর, জাসদ (ইনু) নেতা ইমদাদুল হক ইমদাদ, গণফ্রন্ট নেতা আফজাল হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা মাছুদার রহমান হেলাল, ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান আকন্দ, বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু ও মো. রাকিব হাসান।

বগুড়া-৪ আসন থেকে সবাই স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে জেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মো. গোলাম মোস্তফা, আলহাজ ইলিয়াস আলী, আবদুুল জব্বার প্রামাণিক, কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, শাহীন মোস্তফা কামাল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ আসনের উপনির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় প্রাণ ফিরে পেয়েছেন নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে সব বিভেদ ভুলে নৌকার পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তারা। গত রবিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (গোমস্তাপুর-নাচোল-ভোলাহাট) আসনের নৌকার মনোনয়নপান জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমান এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবদুল ওদুদ। মনোনয়ন পাওয়ার সংবাদে এই দুই আসনের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় আনন্দ মিছিল বের করে নৌকার পক্ষে ভোট চান। সর্বোপরি এই মনোনয়ন পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ রুহুল আমিন বলেন, দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। তাই নৌকার পক্ষেই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে এই আসন দুটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া হবে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে সদর আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে তোলেন আবদুুল ওদুদ এবং ২০১৪ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট আসন থেকে বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন মুহা. জিয়াউর রহমান।

তফসিল অনুযায়ী, এই আসনগুলোয় মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৫ জানুয়ারি, বাছাইয়ের তারিখ ৮ জানুয়ারি এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৫ জানুয়ারি এবং ১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর