মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর মৃত্যু

শিক্ষার্থীদের অবরোধ চালক-হেলপার রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষার্থীদের অবরোধ চালক-হেলপার রিমান্ডে

নাদিয়ার সহপাঠীরা গতকাল উত্তরায় সড়ক অবরোধ করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাসচাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী নাদিয়ার মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর উত্তরায় সড়ক অবরোধ করেন তার সহপাঠীরা। এর আগে তারা আশকোনায় নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ করতে করতে কাওলা মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ করেন। তবে কাওলা মোড় অবরোধ করে রাখলেও বিদেশগামী যাত্রী ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে রাস্তার পাশ দিয়ে যেতে দেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে যানবাহনের লাইসেন্স দেখে দেখে গাড়ি ছাড়তেও দেখা গেছে।

এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাদিয়া সুলতানাকে চাপা দেওয়া বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় মিরপুরের শাহ আলী এলাকা থেকে ওই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাবাসাদের জন্য দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। নাদিয়ার স্বজন ও সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার ক্লাস না থাকায় এক বন্ধুর সঙ্গে তার মোটরসাইকেলে করে বই কিনতে উত্তরার বাসা থেকে ভাটারা এলাকায় যাচ্ছিলেন নাদিয়া (১৯)। কুড়িল বিশ্বরোডে তাদের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয় ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের একটি বাস। এতে তারা রাস্তায় ছিটকে পড়েন। বাসটি নাদিয়ার মাথার ওপর দিয়ে গেলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আহত হন নাদিয়ার বন্ধু মোটরসাইকেল চালক মেহেদি হাসান। এ ঘটনায় ভাটারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘাতক বাসটি জব্দ করে। এ ছাড়া নাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি শেষে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে নাদিয়ার বাবার কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়। মেহেদি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিপল-ই দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। আর নাদিয়া ফার্মেসি বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তার পরিবার থাকে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায়। এক সপ্তাহ আগে উত্তরায় একটি হোস্টেলে উঠেছিলেন নাদিয়া। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায়। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় নাদিয়া। তার বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন একটি পোশাক কারখানায় সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে চাকরি করেন।

নাদিয়ার মৃত্যুর প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে কাওলা মোড় ঘণ্টাখানেক অবরোধ করে রাখেন নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। এতে গতকাল বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ওই এলাকা দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের আশ্বাসে চার দফা দাবি ঘোষণা করে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাহিদ বলেন, আমাদের বোন মারা গেছে, একজন শিক্ষার্থী মারা গেছে, কিন্তু এ বিষয়ে কারও কোনো দায়িত্ব নেই? আমাদের চার দফা দাবি মানতে হবে। নয়তো আবারও সড়ক অবরোধে নামবে শিক্ষার্থীরা। আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হলো। এর মধ্যে আমাদের ঘোষিত চার দফা দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চাই। দাবি পূরণ না হলে আবারও সড়কে নামতে বাধ্য হব। ভিক্টর ক্ল্যাসিকের কোনো বাস সড়কে চলতে পারবে না। যদি ভিক্টর ক্ল্যাসিকের কোনো বাস সড়কে চলাচল করে তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে সড়কে নামতে বাধ্য হবেন। এর আগে গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গুলশান বিভাগের ডিসি আবদুল আহাদ বলেন, ঘাতক বাসটির চালক লিটন (৩৮) ও হেলপার আবুল খায়েরকে (২২) গ্রেফতার করা হয়েছে। লিটন ভোলা সদরের কালু মিয়ার ছেলে এবং হেলপার আবুল খায়ের একই উপজেলার বিদুরিয়া গ্রামের হাসেম ঘরামীর ছেলে। দুজনই বাড্ডার আনন্দনগরের সার্জেন্ট টাওয়ারের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন। নাদিয়ার মৃত্যুর পর ভাটারা থানায় মামলা করেন তার বাবা জাহাঙ্গীর। অন্যদিকে নাদিয়ার সহপাঠী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতারের আলটিমেটাম দেন। ঘাতক চালক ও হেলপারকে গ্রেফতারে ভাটারা থানার ওসির নেতৃত্বে একাধিক টিম অভিযান শুরু করে। রাতেই সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত বাসের চালক ও হেলপারকে শনাক্ত করা হয়।

সকালে মিরপুরের শাহ আলীর প্রিয়াংকা হাউসিং থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি দাবি ছিল বাসচালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করা। তাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন- ভিক্টর ক্ল্যাসিক বাসের রুট পারমিট বাতিল ও এ পরিবহনের বাস যেন সড়কে না চলে। সে বিষয়ে আমরা আজ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এ ছাড়া রুট পারমিট বাতিলের বিষয়টি একটু সময়ের ব্যাপার। আর নাদিয়ার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও কাওলা এলাকায় নাদিয়ার নামে একটি বাস স্টপেজ করারও দাবি করেছেন। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলব। এ ছাড়া ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলব। আর স্টপেজ নির্মাণের বিষয়টি সিটি করপোরেশন দেখবে। আদালত সূত্র জানিয়েছেন, গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করা হলে ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের চালক লিটন ও হেলপার আবুল খায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিচারক। এর আগে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সৈয়দ মোস্তফা রেজা নূর দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সর্বশেষ খবর