রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
দেশব্যাপী শোডাউনে দুই দল

রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে শান্তি সমাবেশ

সংসদকে ছোট করতে বিএনপি প্রার্থী করেছে হিরো আলমকে : কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে শান্তি সমাবেশ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে বিএনপি।

গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিকালে কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল মাঠে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব বললেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে হারানো হয়েছে। হায়রে মায়া! হিরো আলমের জন্য এত দরদ উঠল তার। তিনি ভেবেছিলেন, হিরো আলম জিতে যাবে। কিন্তু হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। হিরো আলমকে বিএনপি নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। অবশেষে ফখরুলের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব, পাকিস্তান আমল তো ভালো, এখন পাকিস্তানের কী অবস্থা? বাংলাদেশের ছয় মাস আমদানি করার রিজার্ভ আছে। পাকিস্তানে ৩ সপ্তাহের রিজার্ভও নেই। আজকে ক্ষুধায় পাকিস্তান কাঁপছে। সেই পাকিস্তান আপনার ভালো লাগে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রমুখ। শান্তি সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ। মঞ্চে অনেক লোকের উপস্থিতিতে বিরক্ত প্রকাশ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পেছনে এত লোক কেন দাঁড়িয়েছেন? আমাদের এত নেতার দরকার নেই। সরে যান। ছাত্র নেতারা এত বড় নেতা হয়ে গেছেন? তারা মঞ্চে কেন? এটা আওয়ামী লীগের মিটিং। আমি যখন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম তখন আওয়ামী লীগের মঞ্চ হতো বায়তুল মোকাররমের সামনে। আমি সভাপতি হয়ে এক দিনও মঞ্চে উঠতে পারিনি, বক্তৃতা তো দূরের কথা। আর এখন আমার ছাত্র ভাইদের জ্বালায় মঞ্চ ভেঙে পড়ে। সব প্রাক্তন নেতা! ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এত সুন্দর পরিবেশ, হাজার হাজার শিক্ষার্থী। মঞ্চে এত ভিড়, ধারণ করতে পারেনি। আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেন। আমার পাঁচ পাঁচবার ড্রেসিং করতে হয়েছে। আমি তো সেটা বলিনি। এসব নিয়েই আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে আমি যাচ্ছি। প্রতিদিন পার্টি অফিসে আসি। দল করলে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে। তিনি বলেন, নামাজ হচ্ছে মসজিদে আজান দিচ্ছে, স্লোগান দিয়ে যাচ্ছে, তখন যে মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছে, আমরা নামাজ পড়ি, আওয়ামী লীগের ছেলেরা স্লোগান দিচ্ছে। এগুলো শিখতে হবে। এসব বিষয়ে ট্রেনিং দিতে হবে। বাজে লোকের প্রয়োজন নেই, ভালো লোকের দরকার। ভালো লোক দিয়ে কমিটি করুন। ত্যাগী লোকদের দিয়ে কমিটি করুন।

ঢাকাসহ সারা দেশে শান্তি সমাবেশ : বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গতকাল বিভাগীয় শহরসহ সারা দেশে শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। এতে আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল মাঠে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। অন্যদিকে সিলেটে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, বরিশালে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, রংপুরে মহানগর আওয়ামী লীগ, খুলনায় মহানগর আওয়ামী লীগ এই শান্তি সমাবেশ করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট জানান, সিলেট মহানগরের চৌহাট্টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপির লজ্জা নেই, তারা বেহায়া। বিএনপি বলেছিল, ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশ খালেদা জিয়া ও তারেকের কথায় চলবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশ চলছে বঙ্গবন্ধুকন্যার কথায়। জনসমর্থন হারিয়ে আবোল-তাবোল বকছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। দেশের মানুষ কেবল শেখ হাসিনাকেই চায়। কারণ শেখ হাসিনাই মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট-ঢাকা ছয় লেন সড়কসহ বড় বড় উন্নয়ন করেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন প্রমুখ।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, নগরীর ফজলুল হক এভিনিউতে সিটি করপোরেশনের সামনে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগকে ভয় দেখানোর কিছু নেই। তারা রাজপথে আছে, রাজপথে থাকবে। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, দুষ্টু লোকের মিষ্টি কথায় ভোলা যাবে না। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম ছরোয়ার রাজিবের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য গোলাম রব্বানী চিনু ও আনিসুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিম। এ ছাড়া দলের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা জানান, শিববাড়ি মোড়ে এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা নিয়ে বিএনপি অসত্য তথ্য তুলে ধরে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি ও জামায়াতকে দেশে আর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে দেওয়া হবে না। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা। বক্তারা আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবিলা করতে তৃণমূলে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। শান্তি সমাবেশে নৌকায় ভোট দিয়ে আগামী নির্বাচনেও শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর