শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাড়ছে লাশ

বিধ্বস্ত রুশ যুদ্ধবিমান

প্রতিদিন ডেস্ক

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি এ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রুশ বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ দেশটির বড় অংশে প্রবেশ করে। অভিযান সম্পর্কে রাশিয়ার ভাষ্য ছিল, তাদের লক্ষ্য ইউক্রেনকে দখল করা নয়, দেশটি থেকে ‘নাৎসিজম’ নির্মূল করা। এ অভিযানের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পক্ষাবলম্বন করে এবং বেশ দ্রুততার সঙ্গে রুশ বাহিনীকে মোকাবিলার জন্য বিপুল সামরিক সাজ-সরঞ্জাম সরবরাহ করতে থাকে। পরিণতিতে যুদ্ধ পুরো এক বছরেও শেষ হয়নি। বরং এই যুদ্ধ এখন ইউক্রেন ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী শীতল যুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। যা ক্রমেই গুরুতর পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে। এতেকরে করোনা মহামারি পরবর্তী গোটা বিশ্বকে সামরিক ক্ষেত্র ছাড়াও আরেকটি ভয়ংকর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুযায়ী, এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ (নিউ স্টার্ট) চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালালে রাশিয়াও প্রস্তুত। মার্কিন পরমাণু অস্ত্রে জবাব রাশিয়াও দেবে।’ পুতিন আরও উল্লেখ করেন, ‘পশ্চিমারা যুদ্ধ শুরু করেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কেবল তাদের থামাতে শক্তি প্রয়োগ করছি। পশ্চিমা প্রভাবশালীরা তাদের লক্ষ্য গোপন রাখেনি। তারা রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় নিশ্চিত করতে চায়। এর অর্থ, তারা আমাদের একেবারে শেষ করে দিতে চায়।’ এসব ঘটনার মধ্যেই গত বুধবার রাশিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাকে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে একটি আক্রমণাত্মক পথ বেছে নিয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে আমেরিকা রাশিয়ার সঙ্গে সমস্ত ক্ষেত্রে গভীর সংঘাতে জড়িত হচ্ছে, যা হিতে বিপরীত হবে।’ এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র একদিকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো যেমন একদিকে তাদের শক্তি ও প্রভাব বিস্তারে মরিয়া তৎপরতা চালাচ্ছে, অন্যদিকে পশ্চিমা বিরোধী শক্তিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে চীন, ইরানসহ আফ্রো-এশীয় দেশগুলোর সামরিক-অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বলয় তৈরি হয়েছে। সবমিলে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে বিরোধাত্মক উত্তেজনা বাড়তে বাড়তে তা ক্রমেই তীব্রতর হয়ে উঠছে। এর পাশাপাশি উভয় পক্ষই ইউক্রেনের মাটিকে ব্যবহার করে ‘প্রক্সি বিশ্বযুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, শেষ পর্যন্ত এ প্রক্সিযুদ্ধ ইউক্রেনের মাটি থেকে কেবলই বাইরে ছড়িয়ে পড়ার অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ‘পরাশক্তি’ সমূহের পাল্টাপাল্টি আর্থ-বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা, অবরোধ আরোপ, তেল বাণিজ্য, অস্ত্র বাণিজ্য ইত্যাদির কারণে বিশ্বের বাকি দেশগুলোতে গুরুতর রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেক দেশেই এরই মধ্যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যুদ্ধ পরিস্থিতি অবিলম্বে দূর না হলে গোটা বিশ্বে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠবে, যা ধারণারও বাইরে চলে যেতে পারে।

ইউক্রেন সীমান্তে রুশ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত : রাশিয়ার বেলগ্রোদ অঞ্চলে দেশটির একটি সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় বিমানটির একজন পাইলট নিহত হয়েছেন। স্থানীয় গভর্নর ভ্যাচেস্লাভ গ্ল্যাডকভ বলেছেন, গতকাল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বিমান ইউক্রেন সীমান্তের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে। সূত্র : সিএনএন। গভর্নর ভ্যাচেস্লাভ গ্ল্যাডকভ বলেন, একটি তদন্ত দল এবং জরুরি পরিস্থিতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে কাজ করছেন। টেলিগ্রাম বার্তায় তিনি বলেন, ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, এসইউ-২৫ অ্যাটাক বিমানটি যুদ্ধের একটি মিশন শেষে বেলগ্রোদ অঞ্চলে ঘাঁটিতে ফিরছিল। ওই সময় এটি বিধ্বস্ত হয় এবং এর পাইলট নিহত হন। বিমানটি জনবসতিহীন এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে। ভূপৃষ্ঠে (ঘটনাস্থলে) কোনো ক্ষতি হয়নি। জানা গেছে, বেলগ্রোদ অঞ্চলটি ইউক্রেনের সীমান্ত এবং ইউক্রেনীয় শহর খারকিভের এপারে অবস্থিত। সম্প্রতি এ অঞ্চলে ইউক্রেনের গোলা নিক্ষেপসহ কয়েকটি অঘটন ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর