শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুবাই পালানোর আগে ঠিকানা কলকাতার বস্তি

কলকাতা প্রতিনিধি

বাংলাদেশের পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে গা ঢাকা দিয়েছিলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ফরতাবাদ এলাকায়। পরিচয়

গোপন করে পাঁচ-ছয় বছর বাস করেন ফরতাবাদের উদয় সংঘ ক্লাবের পাশেই এক বস্তিতে। স্থানীয় বাসিন্দা জাকির খানের ভাঙাচোরা বাসার দোতলায় মাসিক ২ হাজার রুপিতে ঘরভাড়া নিয়ে থাকতেন আরাভ ও তার স্ত্রী সাজেমা নাসরিন। এরপর জাকির খান ও তার স্ত্রী রেহানা খানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন তারা। সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েই জাকির ও রেহানার আইডি (আধার) কার্ড সংগ্রহ করে তাদের উভয়কে কথিত বাবা-মার পরিচয় দিয়ে আরাভ ভুয়া ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। সেই পাসপোর্ট দিয়েই দুবাইয়ে পালিয়ে যান। কয়েক বছর দুবাইতেই অবস্থান করছেন দুবাইয়ের গোল্ড বাজারে অবস্থিত আরাভ জুয়েলারি শোরুমের মালিক আরাভ খান।

দিন কয়েক আগে এক ভিডিওবার্তায় দুবাইয়ে আরাভ জুয়েলারি নামে একটি শোরুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায় বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। সাকিবের এই ভিডিওবার্তাটি ওই জুয়েলারির স্বত্বাধিকারী আরাভ খানের ফেসবুক পেজ থেকেই গত ৩ ফেব্রুয়ারি শেয়ার করা হয়। এরপর ১৫ মার্চ আরাভ জুয়েলারি শোরুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন শাকিব খানসহ দেশ-বিদেশের একাধিক সেলিব্রেটি।

জানা গেছে, আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় নামের ব্যক্তিটি আদতে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মোল্লা। আরাভ ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করেই কয়েক বছর ধরে দুবাইয়ে বাস করছেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ওই পাসপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। শুধু তাই নয়, তার স্ত্রী ভারতীয় নাগরিক (আসাম) সাজেমা নাসরিনের পাসপোর্টটিও ভারতীয়। এমনকি আরাভের কথিত বাবা-মা জাকির খান ও রেহানা খানের পাসপোর্টেও তাদের উভয়ের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে কন্দর্পপুর, উদয় সংঘ ক্লাব, রাজপুর-সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা-৭০০০৮৪। কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস (ইএম বাইপাস) ধরে সোজা ফরতাবাদ মোড় থেকে বাম দিকে ৮০০ মিটার ভিতরে ঢুকলেই কন্দর্পপুর উদয় সংঘ ক্লাব। সেখানে জাকির খানের নাম বলতেই এক নারী এসে তার বাড়ি দেখিয়ে দিলেন।

বোঝাই গেল, ওই এলাকায় যথেষ্ট পরিচিত নাম জাকির খান। বছর দুয়েক আগে হৃদরোগে মারা গেছেন জাকির। তার বাড়িতে ঢুকতেই দেখা হলো তার স্ত্রী রেহানা খানের সঙ্গে। প্রথম দিকে মুখ খুলতে ইতস্তত করলেও গণমাধ্যমের কর্মী বলে পরিচয় দিতেই কিছুটা স্বাভাবিক হন রেহানা। মোবাইলে আরাভের ছবি দেখেই রেহানা জানান, ‘পাঁচ বছর আগে আমাদের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে এসেছিল। আমাদের বাসায় এক বছর ভাড়া ছিল, এরপর চলে যায়। এ সময় মাসিক ২ হাজার রুপি করে ভাড়া দিত।’ রেহানার দাবি, ‘তাদের আধার কার্ড নিয়ে আরাভ কী একটা ডকুমেন্টস তৈরি করবে বলেছিল। সেই কারণে আমি ও আমার স্বামী উভয়ই আরাভকে আমাদের আধার কার্ড দিয়ে দিই।’

সর্বশেষ খবর