মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইভিএম নিয়ে অন্ধকারে ইসি

♦ মেরামতে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে কি না নিশ্চিত করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে আজ চিঠি দিচ্ছে কমিশন ♦ সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে ১৮৬টি আবেদন জমা, রংপুর-সিলেটে নেই ♦ কুমিল্লা, রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকা অঞ্চলেই সীমানা নিয়ে এসব দাবি-আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে এখন অন্ধকারে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংসদ নির্বাচনে কতটি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ইসি। কেননা ইসির হাতে থাকা ইভিএমগুলোর মেরামত প্রয়োজন। এ জন্য লাগবে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। আজ এই টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

এদিকে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান গতকাল বলেছেন, ইভিএম নিয়ে কী হবে না হবে জানি না। উই আর ইন ডার্ক (আমরা অন্ধকারে)। তিনি বলেন, ১৫ মার্চের কমিশন বৈঠকে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটা চিঠি দেওয়ার জন্য বলেছি। ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার মতো লাগবে। সেটা পাওয়া যাবে কি না নিশ্চিত করার জন্য আমরা একটি চিঠি দিতে বলেছি। চিঠিটি প্রস্তুত রয়েছে। আজ চিঠিটি দেওয়া হতে পারে।

সীমানার পক্ষে-বিপক্ষে এবার ১৮৬টি আবেদন : সংসদীয় আসনের বর্তমান সীমানার পক্ষে-বিপক্ষে এবার ১৮৬টি আবেদন জমা পড়েছে। রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে দাবি-আপত্তি আবেদন করেনি কেউ। কুমিল্লা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৮৪টি, রাজশাহীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩টি আবেদন রয়েছে। এ ছাড়া বরিশালে ২৯টি, ঢাকায় ১৮টি, খুলনা ও ফরিদপুর অঞ্চলে পাঁচটি করে এবং ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি করে আবেদন পড়েছে। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আবেদনগুলো আসনভিত্তিক ভাগ করে কোন আসনে কতটি দাবি বা আপত্তি পাওয়া গেছে সেগুলো নিয়ে কাজ করবে ইসি সচিবালয়। একই আসনে পক্ষে-বিপক্ষে এমন আবেদন থাকতে পারে। কোনোটা আবার নতুন প্রস্তাবসহ আবেদন থাকতে পারে। এটা যখন বিন্যাস করা হবে তখনই বোঝা যাবে, কে কী চেয়েছে। এটা করতে একটু সময় লাগবে। এরপর কমিশনে প্লেস করবে। কমিশন তখন শুনানি করবে। কোনটার সীমানা পরিবর্তন করতে হবে, কোনটার লাগবে না তখন নির্ধারণ হবে।

তিনি জানান, বর্তমান সীমানাই বহাল রাখার আবেদন যারা করেছেন তাদের আবেদনের শুনানি নেওয়ার দরকার নেই। যদি বিপক্ষে কেউ বলে থাকে তখন শুনানির দরকার হবে। সব কিছু পর্যালোচনা করে আগামী মাসে শুনানি হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পাঁচ বছর আগের সীমানা বহাল রেখেই ২৬ ফেব্রুয়ারি খসড়া সীমানা প্রকাশ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এর মধ্যে মাত্র ছয়টি আসনে প্রশাসনিক নতুন এলাকা নাম পরিবর্তন হওয়ায় তা সংশোধনের প্রস্তাব করে ইসি। ৩০০ নির্বাচনী এলাকার খসড়া নিয়ে ১৯ মার্চ পর্যন্ত দাবি ও আপত্তি জানানোর সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দাবি-আপত্তির আবেদন নিয়ে শুনানি শেষে এ বছরের মাঝামাঝি এসব আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করার কথা রয়েছে।

 

ইভিএমের টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে ইসি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণে হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ ছাড় চেয়ে দ্রুত অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান। অর্থ জোগান না পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানান তিনি। এ নির্বাচন কমিশনার জানান, ১৫ মার্চের কমিশন বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটা চিঠি দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ১ লাখ ৪০ হাজার ইভিএম মেরামতের জন্য ১ হজার ২৬০ কোটি টাকার মতো লাগবে। একটা চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ পাঠানো হতে পারে। টাকার নিশ্চয়তা যদি পাওয়া যায়, আমরা অর্থবছরভিত্তিক এই অর্থবছরে অর্ধেক দেওয়ার জন্য, পরবর্তী অর্থবছরে বাকি অর্ধেক দেওয়ার জন্য এরকম একটা প্রস্তাব আমরা পাঠাচ্ছি। যদি অর্থ বিভাগ টাকা সংস্থান করে তাহলে আমরা ইভিএমের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হব। কমিশনের হাতে থাকা ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ করে ৫০-৭০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা রয়েছে ইসির, বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট করতে হবে। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর বলেন, (ইভিএম মেইনটেইনেন্সের জন্য) যদি টাকা না পাওয়া যায় তাতেও আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে -ব্যালটে কতটা করব বা ইভিএমে আদৌ করব কি না। কাজেই সবটাই নির্ভর করবে অর্থ প্রাপ্তির ওপর।

 

আরপিও সংশোধনীর খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে

জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছিল ইসি। এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, ইসি যে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিল, তা আইন মন্ত্রণালয় এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। আইনমন্ত্রী এখন দেশের বাইরে আছেন। তিনি সম্ভবত ২৮ মার্চ দেশে ফিরবেন। এরপর হয়তো সংশোধনী প্রস্তাবগুলো মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তোলা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর