শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

আকাশছোঁয়া বিমান ভাড়ায় বিপাকে যাত্রী

সমান দূরত্বে ভারতের দ্বিগুণ বাংলাদেশে ♦ কভিডের আগের তুলনায় এশিয়ায় বেড়েছে ৩৩% ♦ ফ্লাইট কম, টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম

শাহেদ আলী ইরশাদ

আকাশছোঁয়া বিমান ভাড়ায় বিপাকে যাত্রী

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাতে লাগবে ঠিক ৪ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। আপনাকে কলকাতা-দুবাই-কলকাতা যাতায়াতের জন্য এমিরেটস এয়ারলাইনসে ভাড়া দিতে হবে ৩৪ হাজার ৫২ রুপি বা ৪২ হাজার ৭৭৫ টাকা। একই এয়ারলাইনসে আপনি যদি ঢাকা থেকে দুবাই গিয়ে আবার ঢাকায় ফেরত আসেন তাহলে আপনাকে গুনতে হবে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। গতকাল এমিরেটস এয়ারলাইনসের ওয়েবসাইটে গিয়ে ঢাকা ও কলকাতার বিমান ভাড়ার এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

শুধু দুবাই নয়, ঢাকা থেকে বিশ্বের যে কোনো দেশে যাওয়ার জন্য গুনতে হচ্ছে প্রতিবেশী দেশটির দ্বিগুণ ভাড়া। কয়েকটি দেশে যেতে বিমান ভাড়া দুই থেকে চার গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চাহিদার তুলনায় ফ্লাইট সংখ্যা কম থাকার পাশাপাশি টিকিট বিক্রিতে অনিয়মের কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে, বেড়েছে ভাড়া। এতে বেশি বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যেতে কিছুদিন আগেও ভাড়া ছিল ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। সম্প্রতি সেই ভাড়া বেড়ে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখে পৌঁছেছে। আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যেতেও বিমানের ভাড়া বেড়েছে। এতে বেশি বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। কারণ এসব দেশেই বেশির ভাগ শ্রমিক কাজে যাচ্ছেন।

বিমানের টিকিট বিক্রির আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট স্কাইস্ক্যানার ট্রাভেল ইনসাইটের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় গত ফেব্রুয়ারিতে এ অঞ্চলে টিকিটের দাম ৩৩ শতাংশ বেশি ছিল। অথচ একই সময়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় যথাক্রমে টিকিটের দাম বেড়েছে ১২ ও ১৭ শতাংশ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চার বছর আগের তুলনায় এখন যাত্রীদের দ্বিগুণ বিমান ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

মালয়েশিয়াপ্রবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে এসে বিপদে পড়ে গেছি। আসার সময় ফিরে যাওয়ার টিকিটের জন্য ৪০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলাম। সেই টিকিটের দাম এখন ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। ঋণ নিয়ে টিকিট কেটে যেতে হচ্ছে। আগে টিকিটের যে দাম ছিল তার থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছে।’ কাতারপ্রবাসী জাকির হোসেন বলেন, ‘টিকিটের দাম এত বেড়েছে যে অনেকে চাইলেও দেশে আসতে পারেন না।’

এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কর্মীদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কারণ বিমান ভাড়া বেড়ে গেলে তার দায় কর্মীর ঘাড়েই পড়ে। বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী যাত্রীদের পাসপোর্ট নম্বর ছাড়া আগেই একসঙ্গে অনেক টিকিট কিনে ফেলছে। সেগুলো পরে বেশি দামে বিক্রি করছে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে দুবাইর ফ্লাইট হচ্ছে প্রায় ৫ ঘণ্টা। আবার বাংলাদেশ থেকেও দুবাইয়ের ফ্লাইট ৫ ঘণ্টা। কলকাতা থেকে দুবাইয়ের বিমান ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় সর্বনিম্ন ২৫ হাজার। বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হয়েছে ৭৪ হাজার টাকা। এটা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। এয়ারলাইনসগুলো অনেক সময় গুটিকয় ব্যবসায়ীর ওপর নির্ভর করে। তারা এখানে বিনিয়োগ করে রেখেছে। বিনিয়োগটা এমন যে তারা জানিয়েছেন এখানে আমার ১ হাজার টিকিট ব্লক থাকবে। সেখানে কোনো ব্যক্তির নাম নেই। তাহলে ১ হাজার টিকিট কার কাছে বিক্রি করে দিলেন তার কোনো হিসাব নেই। এতে সব এজেন্সির কাছে পর্যাপ্ত টিকিট যাচ্ছে না। হাতে গোনা কয়েকজন একচেটিয়ে ব্যবসা করছে। মাঝখান থেকে টিকিট কিনতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে যাত্রীদের।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস বাংলাদেশ (আটাব)-এর মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ বলেন, ‘নাম ছাড়া টিকিট বিক্রি বন্ধ করা দরকার। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, কয়েকটি রুটে যাত্রীর তুলনায় ফ্লাইটের সংখ্যা কম থাকায় ভাড়া বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ যাত্রী যায়, সে পরিমাণ ক্যাপাসিটি নেই। সাম্প্রতিককালে বেশ কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইনস বাংলাদেশ থেকে তাদের ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দিয়েছে। কারণ তারা তাদের দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণে বিমানের ভাড়াটা বাড়িয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, গত বছরও বিমানের ভাড়া বৃদ্ধির পর আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অনিয়ম বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পর কমেছিল বিমান ভাড়া।

সর্বশেষ খবর