শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

আগামী সপ্তাহেই গ্রেফতার হতে পারেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

আগামী সপ্তাহেই গ্রেফতার হতে পারেন ট্রাম্প

মার্কিন পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেছে ম্যানহাটানের গ্রান্ড জুরি। এর মধ্য দিয়ে আমেরিকার ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হলো।

অভিযুক্ত করার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্পের আইনজীবী জো ট্যাকোপিনা এবং আরও কয়েকটি সূত্র। তবে তারা এ নিয়ে প্রকাশ্যে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তাও প্রকাশ করা হয়নি। আগামী সপ্তাহে ট্রাম্প আত্মসমর্পণ করতে পারেন, তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁকে হয়তো হ্যান্ডকাফ পরানো হবে না। সূত্র বলছে, ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত করেছে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে যৌন সম্পর্কের কথা প্রকাশ না করতে পর্নো তারকা স্টর্মি ডানিয়েলসকে ট্রাম্প ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। পরে এ ঘটনা ফাঁস হয়ে যায় এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। ড্যানিয়েলস নিজেও ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং অর্থ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ অভিযোগকে ট্রাম্প রাজনৈতিক নিষ্পেষণ বলে অভিহিত করে আসছেন। আগেই তিনি হুমকি দিয়ে রেখেছেন যে, এই মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হলে আমেরিকায় হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হবে। স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক এবং নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন দুটোই অস্বীকার করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি এও বলছেন যে, তার আইনজীবীর কাছে তিনি ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন অভিযোগ গঠনের ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে ৩০ মার্চকে আমেরিকার ইতিহাসে ‘ন্যায়বিচার’ ও ‘জবাবদিহিতার দিন’ বলে উল্লেখ করেছেন।

প্রশ্নবিদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র-নৈতিকতা : গতকাল যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার ঘটনায় গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনায় শুধু রিপাবলিকান দলই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমগ্র মার্কিন জাতি। খবরে বলা হয়, সর্বশেষ ১৮৭২ সালে সে আমলের তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস. গ্রান্টকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁর অপরাধ, সর্বোচ্চ গতিসীমার ঊর্ধ্বে ঘোড়ায় টানা গাড়ি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। তবে এ ঘটনার কিছুদিন আগেই মার্কিন গৃহযুদ্ধে (সিভিল ওয়ার) জয়ী ইউনিয়ন বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি, যার ফলে এই অভিযোগ ধোপে টেকেনি। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হওয়া ও হাজতবাসের ঘটনা শোনা যায়। এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। শত শত রাষ্ট্রপ্রধান, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও সামরিক শাসককে তাদের রাজপ্রাসাদ বা রাষ্ট্রীয় কার্যালয় থেকে ধরে- বেঁধে সরাসরি কারাগারে পাঠানোরও নিদর্শন রয়েছে। তবে এতদিন যুক্তরাষ্ট্র এ দিক দিয়ে নিজেদের ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে দাবি করে এসেছে। ওয়াশিংটনকে সারা বিশ্বের নৈতিকতা ও গণতন্ত্র চর্চার আলোকবর্তিকা হিসেবে দেখা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রও এই ভাবমূর্তি রক্ষায় অনেক সচেষ্ট থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত রীতি ভেঙে ‘সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা’ দেশের দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি শুধু ট্রাম্পের জন্যই সমস্যা নয়- এটি মার্কিন জাতির আত্মপরিচয় ও আত্মবিশ্বাসের ওপর একটি বড় আঘাত বলেই ভাবছেন বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ খবর