মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যালটে ভোট ৩০০ আসনেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যালটে ভোট ৩০০ আসনেই

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে থাকছে না ইভিএম, ৩০০ আসনেই ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে ব্যবহার হবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স। অর্ধশতাধিক আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার মেশিন হাতে থাকলেও মেরামতের জন্য অর্থ প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় ইসিকে নতুন এ সিদ্ধান্ত নিতে হলো। এ ছাড়া ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতাও কমিশনের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত উপস্থাপন করেন নির্বাচন কমিশনাররা। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সভা শেষে কমিশনের এ সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান।

সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমানও।

সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ব্যালট পেপার ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে বলে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানের মধ্যেও দেড় শ আসনে যন্ত্রে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। সেই লক্ষ্যে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকায় ২ লাখ ইভিএম কেনার একটি প্রকল্প প্রস্তাবও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ সংকটের এই সময়ে সরকার তাতে সায় দেয়নি। এ অবস্থায় ইসির হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ করে অন্তত ৫০-৮০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা ছিল ইসির। সেই লক্ষ্যে ইভিএম মেরামত ও ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল সরকারের কাছে। কিন্তু সেই চেষ্টায়ও সাফল্য আসেনি। ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ মেশিন মেরামতের জন্য যে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল; এ অর্থ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তার কারণে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তবে আসন্ন পাঁচ সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার অব্যাহত থাকবে বলে জানান ইসি সচিব।

তিন কারণে সরে আসা : একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হলেও এবার একটি আসনেও হচ্ছে না। এর তিনটি কারণ ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেন ইসি সচিব জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী সর্বোচ্চ দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করা হলেও প্রকল্পটি আর গৃহীত হয়নি। ইভিএমের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফকে ১ লাখের বেশি ইভিএমের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তবে আগামী অর্থবছরে পাওয়া যেতে পারে বলে নিশ্চয়তা দেয়। ‘এ অবস্থায় ইভিএমগুলোর কোয়ালিটি চেকিং করে কাজ করার মতো অর্থ ইসির হাতে নেই। তা ছাড়া এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়’, বলেন ইসি সচিব। ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতাও কমিশনের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে বলে জানান তিনি।

জাহাংগীর আলম বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সময়স্বল্পতা ও অথর্ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ পেতে নিশ্চয়তা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ঐকমত্যের অভাব- সব বিষয় বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে যাবে আর সাত মাস পর। ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোও গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে নির্বাচনী আইন সংস্কার, সীমানা পুননির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, গণমাধ্যমকর্মী নীতিমালার কাজ এগিয়ে চলছে। সংসদ ভোটের আগেই পাঁচ সিটির নির্বাচন সারতে প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর