বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই। গত রাতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজের প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনা সংক্রমণের পর কিডনি সমস্যার পাশাপাশি তাঁর লিভারের সমস্যাও জটিল আকার ধারণ করে। কিছুদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানান রোগেও ভুগছিলেন। গত বুধবার তাঁকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এ অবস্থায় গতকাল দুপুর ২টা ১৫ মিনিট থেকে ডা. জাফরুল্লাহর কিডনির ডায়ালাইসিস চলে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক মামুন মোস্তাফী গত রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফেসবুক পেজে জানানো হয় : ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রাণপুরুষ, প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মঙ্গলবার রাত ১০টা ৪০-এ গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।’ একাত্তরে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় আত্মনিয়োগকারী জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত। তিনি স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।

এদিকে ডা. জাফরুল্লাহকে কোথায় দাফন করা হবে, সে বিষয়ে রাত পৌনে ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। মরহুমের স্ত্রী শিরিন হক, মেয়ে বৃষ্টি চৌধুরী ও ছেলে বারিষ চৌধুরীর সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। রাজনীতিক, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ অসংখ্য বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁকে একনজর দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন।

রাতে ডা. জাফরুল্লাহর মরদেহ বারডেম হাসপাতালের মরচুয়ারিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করেন তিনি। তিনি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি লন্ডনে অস্ত্রোপচারের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এরপর দেশে ফিরে যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসার জন্য সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভারতের আগরতলায় একটি ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন ডা. জাফরুল্লাহ।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশের নতুন ওষুধ নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় কমিউনিটি লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পান। জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণে অবদানের জন্য তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারা জীবন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলেছেন।

সততা, সাহসিকতা, নির্লোভ জীবনযাপন ও দুস্থদের প্রতি পিতৃসুলভ ভালোবাসায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন এক অনন্য মানুষ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৫১ বছর দেশের গরিব অসহায়দের চিকিৎসাসেবা ও নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন। তিনি সারা দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৪০টি পাবলিক হেলথ সেন্টার, এশিয়ার সবচেয়ে বড় কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার, ক্যান্সার হাসপাতাল, ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। সাভারে প্রতিষ্ঠা করেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল ও ফিজিওথেরাপি কলেজ, পাবলিক হেলথ সেন্টার।

সর্বশেষ খবর