শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঘাটতি ছাড়াবে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা

মানিক মুনতাসির

ঘাটতি ছাড়াবে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। যার প্রথম কিস্তি ইতোমধ্যে ছাড়ও করা হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে শিগগিরই। আইএমএফের এই ঋণের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সরাসরি যুক্ত হবে। এতে ডলার সংকট কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। একইভাবে বিশ্বব্যাংক থেকে ১ বিলিয়ন ডলার প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১০ এপ্রিল ওয়াশিংটনে সংস্থা দুটির সদর দফতরে শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন সভা। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার বিষয়ে এক ধরনের সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সহায়তা পাওয়া গেলে বাজেট ঘাটতির অর্থায়নে তা সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এদিকে ৪ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিল ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রাথমিকভাবে বাজেট ঘাটতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এ অঙ্ক চূড়ান্ত নয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগের বছর এ ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এদিকে বাজেট ঘাটতি ও ভর্তুকি কমাতে মূল্য সমন্বয়ের পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার আশা করছে সরকার। ২০২৩-২৪ বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াতে পারে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি, যা বর্তমান বাজেটে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সরকারের বার্ষিক আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ সব সময়ই বেশি। তবে করোনা মহামারির পর শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যে বৈশ্বিক মন্দা চলছে তা কবে শেষ হবে এটা কেউই বলতে পারছেন না। ফলে সরকারের আয় আরও কমে গেছে। অথচ ব্যয় বেড়েছে। ফলে বছর শেষে সরকারের বাজেট ঘাটতি আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ হারে। এতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়েছে। তবে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে বাজেট সহায়তার অংশস্বরূপ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার অর্থ বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশা করছে সরকার। এতে হয়তো বাজেট ঘাটতির চাপ কিছু কমতে পারে। অবশ্য ডলার সংকট মোকাবিলয় আইএমএফের অনুমোদিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে শুরু করেছে সরকার। এদিকে বাজেট ঘাটতি ও ভর্তুকি কমাতে মূল্য সমন্বয়ের পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এর অংশ হিসেবে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আইএমএফ আমাদের যেসব সংস্কারের কথা বলেছে, সরকার যদি এর অর্ধেকও আমলে নেয় অর্থনীতিতে দারুণ এক পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে রাজস্ব খাতের যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে সেগুলো খুবই কার্যকর। এগুলো আমাদের আরও আগেই করা উচিত ছিল। আমরা তা পারিনি। এখনো যদি করতে পারি তবে বাজেট ঘাটতি কমাতে তা সহায়ক হবে।’

আগামী বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য দেওয়া আছে। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় পার্থক্য থাকায় নতুন বাজেটে সরকারকে বিভিন্ন উৎস থেকে ধার করতে হচ্ছে। আসছে ২০২৩-২৪ নতুন বাজেটে ঘাটতি প্রাথমিকভাবে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এদিকে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। বছর শেষে এটা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সুদের হার কমানোয় সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। ফলে সাত মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। যে হারে ব্যাংকঋণ বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর চাপ আরও বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সর্বশেষ খবর