বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডলারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ

♦ কমানো যাচ্ছে না আমদানি ব্যয় ♦ রিজার্ভ বাড়ছে ধীরগতিতে

মানিক মুনতাসির

আন্তর্জাতিক মানদ- বলছে, যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যত বেশি শক্তিশালী, সে দেশের অর্থনীতিও ততটা শক্তিশালী। একই সঙ্গে সে দেশের মুদ্রার মানও তত ওপরে। গত এক বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে বাংলাদেশি মুদ্রার মানও। এক বছর আগে যে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। তার দাম এখন ১০৭ টাকা। ফলে আসছে অর্থবছরের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ সরকারের জন্য। কেননা একদিকে চলছে বৈশ্বিক সংকট। অন্যদিকে আসছে বছর রয়েছে জাতীয় নির্বাচনের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞ। চলতি ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বোর্ডে অনুমোদন হওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি প্রায় ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার ফেব্রুয়ারিতে ছাড় করেছে আইএমএফ। এই ঋণ চলমান ডলার সংকট এড়াতে খুব একটা প্রভাব না ফেললেও সামষ্টিক অর্থনীতিতে এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার ঘটিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সময়ে রপ্তানি আয় খুব একটা না বাড়লেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে আমদানি ব্যয় কমানো যায়নি। যদিও আমদানি খাতে এখনো কঠোর নিয়ন্ত্রণই রয়েছে। যার ফলে গত বছরের ১৭ এপ্রিলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৪.১৬ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিলে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩১.১৮ বিলিয়ন ডলারে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির আলোচনা। অবশ্য এটা নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে ২৫ এপ্রিল থেকে। এ উপলক্ষে সংস্থাটির এশীয় প্যাসিফিক অঞ্চল প্রধানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছেন ২৫ এপ্রিল।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত আইএমএফ মিশন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ তিন থেকে চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এ সময় তারা এই ঋণের বিপরীতে দেওয়া শর্তগুলো পরিপালনের বিষয়ে বিস্তারিত হালনাগাদ জানতে চাইবেন। এ জন্য তারা সব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করবেন বলে জানা গেছে। আইএমএফের দেওয়া সংস্কারমূলক কাজগুলোর মধ্যে ভর্তুকি কমানোর অংশ হিসেবে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। টাকার মূল্য ধরে রাখতে ডলারের বাজারে খরবদারি কমানো হয়েছে। তবে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? এ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি কমাতে সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে আসছে বাজেটে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে সব বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে অর্থবিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। উল্লেখ্য, ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ অনুমোদিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের মধ্যে ৪৭৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের প্রথম কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করা হবে। সে হিসাবে আরও ছয়টি কিস্তি বাকি রয়েছে। সাধারণত বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা করতে প্রতিটি বাজেট ঘোষণার আগে আইএমএফের একটি মিশন ঢাকায় আসে। এবার এই প্রতিনিধি দলের অন্যতম আগ্রহের বিষয় থাকবে ঋণের শর্ত পালনের দিকগুলো। এখন যেহেতু তাদের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি চলছে, তাই বাজেট সহায়তার পাশাপাশি ঋণের শর্ত পূরণের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসবে বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ।

সর্বশেষ খবর