পয়লা মে সোমবার বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের অংশীদারিত্বে এগিয়ে চলার ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান ঘিরে প্রবাসীদের মধ্যে আবেগ-অনুভূতির প্রতি ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আজকের দিনটি ছিল আনন্দের, গৌরবের। সব বাঙালির, বাংলাদেশের সবার জন্য গর্বের দিন। কারণ কিছুদিন আগেই বিশ্বব্যাংক আমাদের ওপর একটু অসন্তুষ্ট ছিল, তারা একটা অপরাধ করেছিল। সেটি তারা বুঝে এখন আমাদের সম্মান দিল। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সবাই একবাক্যে বলেছে, বাংলাদেশ ইজ আ মডেল। দারিদ্র্য দূরীকরণে অভাবনীয় সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছে তারা। নারী জাগরণের কথা বলেছে। স্বাস্থ্য, জ্বালানি খাতে অগ্রগতির কথা বলেছে। বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ মানুষই বিদ্যুৎ-সুবিধা পাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষাসহ শিক্ষার হার বৃদ্ধিতেও বাংলাদেশ অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয় বলে তারা স্বীকার করেছে।
ঐতিহাসিক এ অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রীর হোটেলে প্রেস ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের কয়েকটি উপদেশও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘গত ৫০ বছরে আমরা বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিই এবং বাস্তবায়নও করি। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শুভকর। তবে মাঝখানে একটু ঝামেলা হয়েছিল। সে ব্যাপারটিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত স্মার্টলি হ্যান্ডেল করার অভিপ্রায়ে পদ্মা সেতুর একটি ছবি উপহার দিয়েছেন বিশ্বব্যাংককে। একটা মিথ্যা অভিযোগে পদ্মা সেতুর প্রকল্প থামিয়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা নিজেদের পয়সায় সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি, ‘আমরাও পারি’ সেই লেসন ওদের দিয়েছি। এ সময় পাশে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের সর্বাত্মক সহযোগিতায় বিশাল এই প্রকল্পটি সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মুখ্য সচিব উল্লেখ করেন, আজকের অনুষ্ঠানের এক পর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে বিশ্বব্যাংক যে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেছিল, সেখানে পুরো সময় তারা বাংলাদেশের সাকসেস স্টোরি, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা, ফুড সিকিউরিটি, হেলথ কেয়ার, প্রাইমারি এডুকেশন, শিশুমৃত্যুর হার ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বারবার উন্নয়ন অভিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, বিশ্বব্যাংককে শুধু পার্টনার হিসেবে নয়, বন্ধু হিসেবে পাশে চাই। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ কখনো ঋণচুক্তির বরখেলাপ করেনি। সুদসহ ঋণ ফিরিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা এটিও ওদের জানিয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক আস্থা আর বিশ্বাসের সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, আমরা দুর্নীতিপরায়ণ নই, আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি এবং এটাই আমার স্বপ্ন। আমি আমার বাবা-মাসহ সবাইকে হারিয়েছি। এখন আমার একটিই স্বপ্ন, বাংলাদেশকে উন্নত অবস্থায় নেব। আমরা যে পারি তা আবারও আমরা প্রমাণ করেছি।
ব্রিফিংকালে ড. মোমেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। এই যাত্রায় বিশ্বব্যাংককে আমরা সহায়ক-সহযোগী হিসেবে চাই। ড. মোমেন জানান, আজ আরও ২.২৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। এটি আগের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত। এর ১.৫ বিলিয়ন ডলার হচ্ছে জলবায়ু ইস্যুতে। ৭৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য।উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব সাখাওয়াত মুন। সেখানে আরও ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক সেহেরিন সাবরিন। বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরের ঐতিহাসিক এ আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নাইমুল ইসলাম খান, নঈম নিজাম, মোজাম্মেল বাবুও ছিলেন।
বাংলাদেশ কখনো ঋণের ফাঁদে পড়েনি : এদিকে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরের শিহাতা সম্মেলন কক্ষে নির্বাহী পরিচালক পর্ষদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উপলক্ষে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপি হয়নি এবং ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি। তিনি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করার লক্ষ্যে ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিশ্বব্যাংকসহ বৈশ্বিক উন্নয়ন-সহযোগীদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ কখনোই তার ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত ঋণের ফাঁদে পড়েনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আরও অধিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চাইছে। তিনি বলেন, আমরা এখন আমাদের অংশীদারিত্বের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়ন অর্থায়নের মূল লক্ষ্যের বিষয়ে মনোযোগী থাকতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তরে সম্পৃক্ত রয়েছে। আমাদের সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে জনগণের কাছে তার কথা রেখেছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার জন্য আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।
শেখ হাসিনা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাইরের চাপের কারণে বিশ্বব্যাংক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে (পদ্মা বহুমুখী সেতু) অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের মতো উন্নয়ন-সহযোগীদের আমাদের ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়সাপেক্ষ ৫৩টি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ অর্থ এ পর্যন্ত ব্যাংকের দেওয়া ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান ও ঋণের অংশ।
শেখ হাসিনা বলেন, মানবপুঁজি গঠনে আমাদের কর্মক্ষমতা অবকাঠামো মেগা-প্রকল্পে আমাদের বিনিয়োগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশের নিজস্ব আর্থিক ও কারিগরি সংস্থান দিয়ে ৬.১ কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ আমাদের অর্থনৈতিক পরিপক্বতার লক্ষণ। এ সময় তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, বিনামূল্যের ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যুৎ সুবিধা এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, শিশুকল্যাণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, নগর উন্নয়ন, টেকসই শিল্পায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের সুযোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংককে অর্থায়ন বাড়াতে হবে। শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের এসডিজি সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে তার সুনির্দিষ্ট ধারণা তুলে ধরবে।
প্রধানমন্ত্রী পরে বিশ্বব্যাংকের ইস্ট ডাইনিং রুমে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট, এমডি এবং ভিপিদের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পর একটি উচ্চপর্যায়ের মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেন।
পরে তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেস্টন অডিটরিয়ামে ‘বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ৫০ বছর বিষয়ে প্রতিফলন’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে পৌঁছলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক এবং তার এসএআর ভিপি মার্টিন রাইজার ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের সঙ্গে যৌথভাবে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং প্রদর্শনীর কিছু অংশ ঘুরে দেখেন।
বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পরমেশ্বর আইয়ার, পরিচালক জুনাইদ আহমেদ কামাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনা বিয়েরদে, বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ডক্টর আহমেদ কায়কাউস এবং অন্য পরিচালকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি নৃত্য পরিবেশনাও উপভোগ করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী বাংলাদেশের উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরেছে এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বৈশ্বিক ঋণদাতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মনে করেন এ ফটো প্রদর্শনী একসঙ্গে কী অর্জিত হয়েছে এবং কী কাজ রয়ে গেছে তা স্মরণ করিয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রদর্শনীটি সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার গুরুত্বও তুলে ধরেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের উৎসাহব্যঞ্জক যাত্রায় বিশ্বব্যাংক আমাদের সঙ্গে থাকবে। আসুন, আমরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যৌথ আস্থার চেতনায় একসঙ্গে কাজ করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি বাংলাদেশকে একটি সহনশীল ও সমৃদ্ধ ভূমিতে পরিণত করার জন্য আমাদের সরকারের সংকল্পের প্রতিফলন। প্রধানমন্ত্রী অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার জন্য বিশ্বব্যাংক এবং অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিন্ন শত্রু হচ্ছে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা এবং আমরা এগুলো কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুস্থ মানুষের মধ্যে যে ধরনের হাসি দেখতে চেয়েছিলেন এ প্রদর্শনীতে তা প্রতিফলিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা ও জ্ঞান তৈরিতে বিশ্বব্যাংককে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘এটি উৎসাহজনক যে বিশ্বব্যাংক জলবায়ু অর্থায়নের ওপর জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশের মতো একটি জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য প্রশমন ও অভিযোজন উভয় ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত অর্থায়ন প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে তার নিজস্ব জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল থেকে ৮০০টি প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘মূল খাতগুলোতে আমাদের সবুজ পরিবর্তনকে দ্রুত এগিয়ে নিতে আমরা একটি মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা চালু করছি। শুধু অভিযোজনের জন্য ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের ২৩০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। জুন মাসে প্যারিসে জলবায়ু অর্থায়ন শীর্ষ সম্মেলনকালে বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে আমাদের ফলপ্রসূ আশ্বাস দেওয়ার একটি সুযোগ পাবে।
বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরদের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা চলতি বছর ভূ-অর্থনীতিতে কিছু বড় পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি। উত্তরণকালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এগুলোর প্রভাব রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি বিশ্বব্যাংকও ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর বঙ্গোপসাগরের কাছে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ। এটি ইন্দো-প্যাসিফিকের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী কিছু অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপিসহ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি উদীয়মান প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি। তিনটি মানদণ্ডেই যোগ্যতা অর্জন করে আমরা জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণ লাভ করেছি। তিনি বলেন, ২০২২ সালে আমাদের দারিদ্র্য হার ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে, চরম দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস পেয়ে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। কভিড-১৯ মহামারি, ইউরোপে যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এসব সাফল্য এসেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো সহিষ্ণুতা। আমরা গণহত্যার পর আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং ১৯৭১ সালে ধ্বংসের মুখে থাকা একটি অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নযাত্রা মসৃণ ছিল না। বাংলাদেশ বারবার সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল, চরমপন্থি হুমকি এবং মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। গত দেড় দশকে জাতি অবশেষে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এগুলো ধর্ম, জাতি বা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য ছাড়াই সমান আচরণ নিশ্চিত করে। সুশাসনের জন্য জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন স্তরে দায়বদ্ধ। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বিশ্বব্যাংক অনুদান সহায়তা বাড়িয়েছে। তাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দেখিয়েছে যে তারা প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারে। আমি আস্থাশীল যে আমাদের তরুণ প্রজন্ম সঠিক রাজনৈতিক পরিবেশে আমাদের জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা দেশের দায়িত্বশীল ও অবদানকারী সদস্য হিসেবে আমাদের ভূমিকা আরও প্রসার করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই বৈদেশিক নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনীতি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা আমাদের অগ্রযাত্রার ইতিবাচক দিকগুলোর বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে এবং ভবিষ্যতে একটি প্রতিশ্রুতিশীল উন্নয়নযাত্রায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে।