সোমবার, ৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিজিবির কুচকাওয়াজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকরা ভূমিকা রাখবে

আলী আজম সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে

চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনসহ ব্যক্তিগতভাবে সুদৃঢ়, সুশৃঙ্খল, নির্ভীক ও নির্লোভ চরিত্রের অধিকারী হয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বিজিবির ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এতে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালামের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। ভাষণের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির দুজন বীরশ্রেষ্ঠ, আটজন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিংবদন্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্তভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক পাচার রোধ, নারী ও শিশু পাচারসহ যে কোনো আন্তসীমান্ত অপরাধ দমন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সবার আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, অত্যাধুনিক যুগোপযোগী ও কার্যকর অ্যান্টিট্যাঙ্ক গাইডেড উইপনস, এটিভি, এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিকল এবং এয়ার বোটসহ দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিজিবির প্রশিক্ষণ কর্মকান্ডের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা-সংবলিত ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণের প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিজিবির চারটি মূলনীতি মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে অর্পিত যে কোনো দায়িত্ব পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৪৬৬ রিক্রুট (জিডি) মো. সুহেল মিয়া এবং অন্যান্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকস দলের সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সব শেষে বিজিবির প্রশিক্ষিত সদস্যরা আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং সুসজ্জিত বাদক দল মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করে। উল্লেখ্য, ২০ নভেম্বর ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এতে ৫৩৯ জনের মধ্যে ৫০২ জন পুরুষ ও ৩৭ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।

সর্বশেষ খবর