মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সমরেশ মজুমদার আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কলকাতা প্রতিনিধি

সমরেশ মজুমদার আর নেই

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই। গতকাল স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে কলকাতায় একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। সমরেশ মজুমদারের বড় মেয়ে দোয়েল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বাবা আর নেই। বিকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। গত দু-তিন দিন তাঁর অবস্থার অনেকটাই উন্নতি ঘটে। আমরাও আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু আজ (সোমবার) তাঁর একটি মেজর কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। সেখান থেকে আর প্রত্যাবর্তন হয়নি তাঁর।’ তিনি জানান, ‘বাবার মরদেহ কাল (মঙ্গলবার) সকালে শ্যামপুকুরের বাড়িতে কিছুক্ষণ রাখা হবে। এরপর সেখান থেকে বালিঘাটে নেওয়া হবে শেষকৃত্যের জন্য।’

সমরেশ মজুমদার দুই সপ্তাহ আগে ফুসফুস ও শ্বাসনালি সংক্রমণের কারণে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর রক্তে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল। আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাঁকে। গত শনিবার তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটে। ভ্যান্টিলেশন সাপোর্টও খুলে রাখা হয়। ৭৯ বছর বয়সী এই সাহিত্যিকের শ্বাসনালিতে গভীর সংক্রমণ ছিল। গত এক যুগ ধরেই ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।

সমরেশ মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনে কলাম, ঈদ সংখ্যা ও বিশেষ সংখ্যায় নিয়মিত লিখতেন। তাঁর সর্বশেষ লেখাটি (গল্প) এবারের ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবারের সঙ্গে অন্যরকম সখ্য ছিল তাঁর। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে তাঁকে আজীবন সম্মাননাও দেওয়া হয়েছিল। সমরেশ মজুমদার কলকাতা ও বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখক হিসেবে পাঠকমন জয় করেছেন।

সমরেশ মজুমদার ১৯৪৪ সালের ১০ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় জলপাইগুড়ি জিলা স্কুল থেকে। তিনি কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন তিনি। তাঁর ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতে তাঁকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে। তিনি বেশ কিছু সফল টিভি সিরিয়ালেরও কাহিনিকার। সমরেশের সৃষ্ট চরিত্র অর্জুন ও মাধবীলতা ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশেই সমান জনপ্রিয়। জনপ্রিয় এই লেখক অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন।

কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড আসক্তি ছিল। তাঁর প্রথম গল্প ‘অন্যমাত্রা’ লেখাই হয়েছিল মঞ্চনাটক হিসেবে, আর সেখান থেকেই তাঁর লেখকজীবনের শুরু। তাঁর লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিল দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে। সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ ছাপা হয়েছিল দেশেই ১৯৭৫ সালে। তিনি শুধু তাঁর লেখনী গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি; ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দাকাহিনি, কিশোর উপন্যাস লেখনীতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তাঁর প্রত্যেকটি উপন্যাসের বিষয় ভিন্ন, রচনার গতি এবং গল্প বলার ভঙ্গি পাঠকদের আন্দোলিত করে। সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি। অনেক অসাধারণ লেখনীর শব্দের এই রূপকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইওয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির অ্যাওয়ার্ড।

গ্রন্থ তালিকা : সত্যমেব জয়তে, আকাশ না পাতাল, তেরো পার্বণ, সওয়ার, টাকাপয়সা, তীর্থযাত্রী, ভালোবাসা থেকে যায়, নিকট কথা, ডানায় রোদের গন্ধ, জলছবির সিংহ, মেয়েরা যেমন হয়, একশো পঞ্চাশ (গল্প সংকলন), উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিণী, হৃদয় আছে যার, সর্বনাশের নেশায়, ছায়া পূর্বগামিনী, এখনও সময় আছে, স্বনামধন্য, কলিকাল, স্বপ্নের বাজার, কলকাতা, অনুরাগ, তিনসঙ্গী, ভিক্টোরিয়ার বাগান, সহজপুর কতদূর, অনি, সিনেমাওয়ালা, সূর্য ঢলে গেলে, আশ্চর্যকথা হয়ে গেছে, অগ্নিরথ, অনেকই একা, আট কুঠুরি নয় দরজা, আত্মীয়স্বজন, আবাস, আমাকে চাই, উজান গঙ্গা, কষ্ট কষ্ট সুখ, কুলকু লিনী, কেউ কেউ একা, জনযাজক, জলের নিচে প্রথম প্রেম, জ্যোৎস্নায় বর্ষার মেঘ, দায়বন্ধন, দিন যায় রাত যায়, দৌড় ইত্যাদি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর