শনিবার, ১৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে মাঠে নামছে বিএনপি

চার পর্বে শোডাউন, আজ ঢাকায় সমাবেশ ব্যাপক প্রস্তুতি

শফিউল আলম দোলন

কোরবানির ঈদের আগে চারটি পর্বে ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। এর মাধ্যমে দলটি সাংগঠনিক শক্তির পাশাপাশি জনপ্রিয়তার জানান দিতে চায়। আজ রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে শুরু হবে এ শোডাউন। সেখান থেকেই ঘোষণা দেওয়া হবে নতুন কর্মসূচি। প্রতি শনিবার জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করা হবে। মঙ্গল ও বুধবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়।

জানা গেছে, কোরবানি ঈদের পর রাজধানীকেন্দ্রিক কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। সে ক্ষেত্রে ঢাকা ঘেরাও, ঢাকামুখী রোডমার্চ, ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি আসতে পারে। শেষ পর্যায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা ভাবলেও সেটি ঠিক কখন শুরু হবে, আর কত দিন চলবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তাছাড়া সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা থেকে বিভিন্ন বিভাগ অভিমুখে রোডমার্চসহ হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে আপাতত সেসব কর্মসূচি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলন চলছে, সামনে আরও বৃহৎ কর্মসূচি আসছে। আন্দোলন আরও বেগবান হবে। সরকার বিদায়ে প্রয়োজনীয় সব কর্মসূচি দেওয়া হবে। সরকারের আচরণের ওপরই নির্ভর করবে বিএনপির আন্দোলনের ধরন কী হবে। আন্দোলন হলো একটা ঢেউয়ের মতো। এটা কখনো ওঠে, কখনো নামে। আবার একপর্যায়ে যখন ওপরে উঠে যায় তখন আর নামে না। তাছাড়া শরিক দল ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হচ্ছে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি। প্রণয়ন করা হচ্ছে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণাপত্র। এর মাঝে ৩০ মে রয়েছে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকীর কর্মসূচি। এভাবে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবে বিএনপি। এর মধ্যে থাকবে- সারা দেশে সমাবেশ তথা ব্যাপক শো-ডাউন, রোডমার্চ-লংমার্চ, অবস্থান, মানববন্ধন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সচিবালয়সহ ঢাকা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচি শেষে ঢাকামুখী কর্মসূচি শুরু করতে চায় দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, সরকারের পদত্যাগ ও জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি এবং বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে এ আন্দোলন করছে বিএনপি। ধারাবাহিক এ কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে এক দফা তথা ‘অলআউট’ কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। জানা গেছে, এবারের কর্মসূচির উল্লেখযোগ্য সব নির্দেশনা আসছে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে। তাছাড়া তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশনাও আসছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকেই। কেন্দ্র ছাড়াও প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করছেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতি আজ একাট্টা। এ জন্য অনির্বাচিত সরকার পতনে দেশব্যাপী আন্দোলন চলছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে কোনো কর্মসূচি সফল করতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এ সরকারের পতন অনিবার্য। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকায় আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পন্ন। সর্বস্তরের মানুষকে জনতার এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা শহরে কোথায়ও কোনো কর্মসূচি নেই। তারপরও গায়েবি মামলা শুরু হয়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ মাঠ খালি করতে চায়। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে রাতের আঁধারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। জানা যায়, সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়কসহ বিভিন্ন দাবিতে গত বছরের অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। এতে সারা দেশে আশাতীত জনসমর্থন এবং সাড়া পড়ে। এর মাধ্যমে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীরা আরও সক্রিয় এবং উজ্জীবিত হন। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় দলটি। ২৪ ডিসেম্বর থেকে অভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম (একাংশ), বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যসহ -য়েটি দল মাঠে নামে। এমনকি রমজান মাসেও কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট। এরপর প্রায় দুই সপ্তাহ বিরতির পর আজ থেকে আবারও মাঠে নামছে বিএনপি।

সর্বশেষ খবর