সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

মূল আঘাত মিয়ানমারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মূল আঘাত মিয়ানমারে

গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার পর মোখা নিয়ে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির খবর এসেছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মোখা বাংলাদেশ এড়িয়ে মিয়ানমারে আঘাত হেনেছে। আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি অনেকটাই কেটে গেছে।

এ বিষয়ে গতকাল সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁও আবহাওয়া অধিদফতর ভবনে আয়োজিত  এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মূল আঘাত হানবে মিয়ানমারের ওপর। যে কারণে বাংলাদেশের জন্য অনেকটাই ঝুঁকি কেটে গেছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা টেকনাফ থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ মিয়ানমারের সিটুই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হবে।

ফলে ঘূর্ণিঝড়ের মূল ঝুঁকিটা চলে যাবে মিয়ানমার অঞ্চল দিয়ে। টেকনাফ, কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের অঞ্চলগুলো ঝুঁকিমুক্ত হতে চলেছে। এর ফলে শুরু থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আমাদের যে ঝুঁকির সম্ভাবনা ছিল, এখন আর ততটা ঝুঁকি নেই। তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার পিক আওয়ার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা। বিকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড় মোখা আমাদের অতিক্রম করে গেলেও এর প্রভাব থেকে যাবে আরও দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত। আর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পরিলক্ষিত হবে টেকনাফ এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপে।

মিয়ানমারে মোখার তান্ডব : এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পাওয়া খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে আছড়ে পড়ে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মিয়ানমারে দুপুর পর্যন্ত অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ গণমাধ্যমকে জানায়, গতকাল বিকালের দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিট্যুয়ে শহরের কাছে ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটারের বেশি বাতাসের গতিবেগ নিয়ে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগ। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তথ্য অফিস জানায়, ঝড়ের কারণে সিট্যুয়ে, কিয়াউকপিউ এবং গওয়া শহরে ঘরবাড়ি, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোবাইল ফোনের টাওয়ার, নৌকা এবং ল্যাম্পপোস্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তান্ডবে বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন থেকে প্রায় ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের কোকো দ্বীপপুঞ্জের বেশ কিছু ভবনের ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, সকালের দিকে মিয়ানমারে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পূর্বাঞ্চলীয় শান রাজ্যের একটি উদ্ধারকারী দল তাদের ফেসবুক পেজে বলেছে, তারা এক দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। টাচিলেক শহরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে বাড়িতে চাপা পড়ে মারা গেছেন তারা। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের মান্দালয় প্রদেশের পাইন ওও লুইন শহরে একটি বটগাছ উপড়ে পড়ে অন্তত একজন মারা গেছেন। সিট্যুয়েতে প্রবল বাতাসের কারণে মোবাইলফোনের একটি টাওয়ার ধসে পড়ে কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরেক খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল ছুঁয়ে গেলেও মোখার মূল ঝাপটাটি গেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে। অতি প্রবল এই ঝড়ের তান্ডবের পূর্ণ চিত্র পাওয়া না গেলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও উত্তর-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা দরকার এবং ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রামানাথন বালাকৃষ্ণান বলেন, ‘যে অঞ্চলটিতে আগে থেকেই মানবেতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেখানে এখন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত একটি দুঃস্বপ্নের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে, এর আগের দুর্যোগময় পরিস্থিতির কারণে যাদের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এরই মধ্যে নিঃশেষিত।’ সিত্তের বাসিন্দা জাও মিন তুন রয়টার্সকে বলেন, ‘রাজ্য সরকার আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে শুরু করে। তাদের খাবার দেওয়া হয়নি, ফলে তারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন পার করছে।’ বিবিসির খবরে বলা হয়, মোখার প্রভাবে স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে বেশি জোয়ারের পানিতে সিত্ত শহরের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। স্থানীয় সূত্র থেকে পাওয়া ভিডিওচিত্রের বরাতে তারা জানিয়েছে, উপকূলে সাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা বাড়ায় আবর্জনা ভেসে এসে শহরের রাস্তাঘাটে জমা হয়েছে এবং সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর