সোমবার, ২২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসির সক্ষমতার প্রমাণ সিটি ভোটে মিলবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসির সক্ষমতার প্রমাণ সিটি ভোটে মিলবে না

এম সাখাওয়াত হোসেন

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন একপক্ষীয় হওয়ায় এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। গতকাল সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত ‘আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন : প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। এম সাখাওয়াত  হোসেন বলেন, আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে। গত ১০ বছরে দেখা গেছে, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ নেই। পার্টির লোকেরাও ভোট কেন্দ্রে যায় না। কারণ তারা ভাবে আমাদের লোকেরাই তো জিতবে। এ অবস্থার কীভাবে সৃষ্টি হলো? নিউট্রাল নির্বাচন হলে কী করে ভোটারকে নিয়ে আসবেন কেন্দ্রে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আবার নির্বিঘ্নে বাড়িতে ফিরতে পারেন। এটিই নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ। এ কাজটি না করতে পারলে নির্বাচন কমিশন ফেল করেছে বলতে হবে। সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটাররা ভোট দিতে না পারলে কী করবেন তা জানেন না। আজ পর্যন্ত ভোট দিতে না পারার কারণে একটা মামলাও হলো না, যে আমি ভোট দিতে পারিনি। কাজেই ভোট দিতে না পারলে তারা কী করবেন, সেটি ভোটারদের জানাতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অতিথি ছিলেন সুজন সহসভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ। লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি ফিরিয়ে আনার জন্য যে মনোভাব দরকার তা কারও মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। তাই সেই ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই পাঁচ নির্বাচনের মাধ্যমে কিছুটা অন্তত স্পষ্ট হবে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়নি। এরপর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গত নির্বাচনে বিরোধী দল অংশ নিয়েছিল। এবার ভোটারদের সামনে কোনো বিকল্প থাকবে না। বিরোধী দল অংশ না নেওয়ায় এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে না। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে এখন নির্বাচন যে অবস্থায় আছে তাতে এই নির্বাচনগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যবেক্ষণের দিক থেকে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। এখন নির্বাচনে যত কম দল অংশ নিচ্ছে, যত কম মানুষ ভোট দিচ্ছে তত বেশি ক্ষমতাসীনদের জন্য সুবিধা হচ্ছে। আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, কয়েকটি দল অংশ না নেওয়ায় এই নির্বাচন নিয়ে একটি বড় অংশের উৎসাহ থাকবে না। তারপরও যারা অংশ নিচ্ছে তারা যাতে সমান সুযোগ পান, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সচেষ্ট হতে হবে। রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, একের পর এক বিতর্কিত নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনব্যবস্থার কেন্দ্রীয় নায়ক ভোটারদের অপমান করা হচ্ছে। ভোটাররা ভোটের দিন ক্ষমতায়িত বোধ করেন, সেটি আবার কবে ফিরে পাব সেটিই আমাদের এখন মূল প্রশ্ন। উল্লেখ্য, আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন নির্ধারিত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর