শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিচলিত নয় সরকার

♦ সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারকেই সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ♦ স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশে নির্বাচনে অনিয়ম করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি ঘোষণা দিয়েছে, তাতে বিচলিত নয় সরকার। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে। মার্কিন এই ঘোষণায় বাড়তি কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী। বরং মার্কিন এই নীতিতে অগণতান্ত্রিক শক্তি ও রাজনৈতিক দল বিএনপি বাড়তি চাপের মধ্যে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রীরা।

বুধবার ঘোষিত মার্কিন ভিসা নীতির প্রতিক্রিয়ায় গতকাল সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের অঙ্গীকারের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল উল্লেখ করে এতে বলা হয়, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে এই সরকারের ধারাবাহিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকারের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকার নজির নেই। জনগণের ভোটাধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে। এই অধিকারের জন্য সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য সংগঠন ও সভাসমাবেশের স্বাধীনতাকে সরকার গুরুত্ব দেয়। বিএনপি সরকারের আমলে এক কোটির বেশি জাল ভোটার কার্ড করা হয়েছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ভোটারদের পাশাপাশি ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও এজেন্টদের মধ্যে আস্থার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবহার চালু করা হয়েছে। নির্বাচনে অনিয়ম মোকাবিলার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনী প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে। যেসব অগণতান্ত্রিক শক্তি সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা সতর্ক থাকবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকবে বলে সরকার আশা করছে। এতে আরও বলা হয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দেশে উন্নয়নের চলমান রাখা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর যে অঙ্গীকার তার পাশে দাঁড়ানোয় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করছে বাংলাদেশ সরকার। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এ সময় দরিদ্র্যতা কমেছে। ২০০৬ সালে যেখানে চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমে ১৮.৭ শতাংশে নেমেছে। এ সময় চরম দারিদ্র্য ২৫.১ শতাংশ থেকে কমে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। গত চৌদ্দ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার কারণেই এই অর্জন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারকেই সমর্থন করেছে যুক্তরাষ্ট্র, চিন্তার কিছু নেই : ভিসানীতিতে সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করতে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারকেই যুক্তরাষ্ট্রে সমর্থন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, তাতে প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। চিঠিতে এক জায়গায় বলেছেন, এই নীতি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়ক হবে। আর গণতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খুঁটি (নির্বাচন) যে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বাধাগ্রস্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র যাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। অতএব, আমরা আমাদের যে অঙ্গীকার, সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন আমরা করতে চাই এটাকেই তারা সমর্থন দিয়েছেন। এতে চিন্তার কিছুই নেই। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করতে যত ধরনের আয়োজন করা প্রয়োজন, আমরা করব। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, গণতন্ত্র দেশে আছে বলেই, প্রধানমন্ত্রী গণতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা করছেন বলেই আমাদের দেশের মানুষের মঙ্গল হয়েছে, উন্নতি হয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক সরকার, আমাদের জনগণের প্রতি বিশ্বাস আছে। সুতরাং এই যে কী তারা করেছে, শুনেছি সব দেশের জন্য, ভালো তো। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এটি বরং আমাদের অবস্থানকে আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে। ফলে আমাদের যেটা ভালো, স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন আমরা করে যাব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, কেউ কেউ অভিযোগ করে যে রাতের অন্ধকারে নাকি ভোট হয়ে যায়, এ জন্য স্বচ্ছ ব্যালটবক্স তৈরি করেছি। নতুন মার্কিন ভিসানীতির ফলে বাড়তি চাপ অনুভব করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, না, বাড়তি কোনো চাপ নেই। তারা তাদের কাজ করেছেন, আমরা আমাদের কাজ করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে, তার পরেও কেন ভিসানীতি আরোপের বিষয়টি আসছে, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুষ্ট লোকরা দেখেন না, জ্বালাও পোড়াও করে। গতকালও পুলিশকে পিটিয়েছে, বাস জ্বালিয়ে দিয়েছে। অতএব, তারা একটু সাবধান হবেন। এই ভিসানীতি শুধু যে সরকারি দল বা সরকারে যারা রয়েছে তাদের জন্য না বিরোধী পক্ষে যারা রয়েছেন তাদের ওপরও বর্তাবে। নতুন ভিসানীতির পর যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে কি না জানতে চাইলে ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে, কোনো সম্পর্কের টানাপোড়েন নেই। ৫২ বছরে আমাদের সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়েছে, তারা এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় বলে তারা চিঠিতে লিখেছে।

কোনো চাপ নেই, বললেন কৃষিমন্ত্রী : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তন নিয়ে সরকার চাপ অনুভব করছে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। গতকাল সচিবালয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তন সব নাগরিকের জন্য সমান। এটা আলাদা কোনো দল বা ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা নয়। আমার মনে হয় ভিসা প্রক্রিয়ার এই পরিবর্তন বিএনপির জন্যও প্রযোজ্য। তারা মানুষ পুড়িয়েছে, গণপরিবহনে আগুন দিয়েছে ও গর্ভবতী মায়ের অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখেছে। এগুলোর কারণে তাদের ভিসা প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়া পরিবর্তনে সরকার চাপ অনুভব করছে না।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখিতভাবে জানিয়েছে, ২০০৮ সালে একটি ফেয়ার ইলেকশনের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এর পরে জনগণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। তিনবার একটি দল ক্ষমতায় রয়েছে বলেই আমাদের নানামুখী উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আরও একটি সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে কোনো মূল্যে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর