শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ড. ইউনূসের এক প্রতিষ্ঠানেই হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি

বিশেষ প্রতিনিধি

ড. ইউনূসের এক প্রতিষ্ঠানেই হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি

১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গ্রামীণ টেলিকম তথা গ্রামীণফোনের লাইসেন্স গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। লাইসেন্স গ্রহণের আগে তিনি সরকারের কাছে অঙ্গীকার করেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য গ্রামীণফোনের লাইসেন্স নিতে চান তিনি। মুনাফা নয় বরং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সেবা দানই হবে এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। এমন অঙ্গীকারের পর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ টেলিকমকে লাইসেন্স দেয় সরকার। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে শুধু নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গ্রামীণফোনের অধিকাংশ শেয়ার বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেন। এতে করে শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের এক প্রতিষ্ঠানই গ্রামীণ টেলিকম প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ড. ইউনূস দেশের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কয়েক হাত ঘুরে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করেন। শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য আদালতে বিচারাধীন মামলার রায় নিজের পক্ষে নিতে বিচারকসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ঘুষ দেওয়ার জন্য একটি দালালচক্রের সঙ্গেও চুক্তি করেন। আর ড. ইউনূসের এসব অর্থ পাচার, দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকা- দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন এবং দ-বিধি অনুযায়ী এসব কাজ গুরুতর দ-নীয় অপরাধ। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এবার তার বিস্ময়কর কর ফাঁকির অপরাধের ঘটনা সবাইকে হতবাক করেছে। কর ফাঁকির ব্যাপকতা, গভীরতা ও অপরাধের অভিনবতা বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর ফাঁকির ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

জানা গেছে, গ্রামীণ টেলিকম বর্তমানে গ্রামীণফোনের ৩৪.২০ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার, যার মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম প্রতি বছর গ্রামীণফোন থেকে হাজার কোটি টাকার ওপর ডিভিডেন্ড পায়। কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় গঠিত এই অলাভজনক কোম্পানির কোনো শেয়ার মূলধন নেই, কোনো ব্যক্তিমালিকানা নেই। আইন অনুযায়ী এর কোনো ডিভিডেন্ট অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের সুযোগও নেই। অথচ ড. ইউনূস প্রতি বছর গ্রামীণ টেলিকমের হাজার কোটি টাকার ওপর ডিভিডেন্ট সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কয়েক হাত ঘুরিয়ে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করে আত্মসাৎ করছেন। যা অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী গুরুতর দ-নীয় অপরাধ। গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর ধারা ২৮ এবং ২৯ এর বিধান লঙ্ঘন করে গ্রামীণ ফোন লিমিটেড থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তার লভ্যাংশ আয়ের ৪২.৬% বিতরণ করে আসছে, যদিও গ্রামীণ কল্যাণ গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার নয়। আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের সমগ্র লভ্যাংশ আয়কে এর আয় হিসেবে বুক করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট হারে কর দিতে হবে। কিন্তু তাদের নিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা গ্রামীণ টেলিকম থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তাদের লভ্যাংশ আয়ের প্রায় অর্ধেক প্রদান করেছে শুধুমাত্র অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ১০-২০% হারে। অথচ আইন অনুযায়ী তাদের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট করের হার ছিল ৩৫% থেকে ৩৭.৫% পর্যন্ত।

এই করপোরেট রেট এবং ডিভিডেন্ড ট্যাক্সের পার্থক্য কর ফাঁকি। কারণ গ্রামীণ কল্যাণ প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনোভাবেই গ্রামীণ টেলিকম এর লভ্যাংশ আয়ের অধিকারী নয়। গ্রামীণ টেলিকম শুরু থেকে যে সব কর ফাঁকি দিয়েছে, সেগুলো যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এই কর ফাঁকির হিসাব শুধু গ্রামীণ টেলিকমের। ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান এবং তার ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে কর ফাঁকির ঘটনা অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মের মতোই বহু বছর ধরে ঘটেছে। ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকির ঘটনাগুলো হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে বিশাল অঙ্কের। গ্রামীণ টেলিকমের ২৬ বছরের কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়। এই দীর্ঘ সময়ে ড. ইউনূস প্রতি বছর শতকরা ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত কর ফাঁকি দিয়ে আসছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গ্রামীণ টেলিকমে ড. ইউনূস ২৫% কর ফাঁকি দিয়েছেন। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১০%। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন বছরে ২০%। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১৫%। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমে প্রতি বছর ১৫% কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কর ছিল ৩৫%, আর প্রদান করেছিলেন মাত্র ২০%।

এটি লক্ষণীয়, ড. ইউনূস তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে দেশের আদালতে বেশ কিছু মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করে রেখেছেন। এসব মামলা ও রিটের উদ্দেশ্য হচ্ছে কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে ড. ইউনূস সুবিধা পাওয়া।

সর্বশেষ খবর