শুক্রবার, ২৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্র চায় সংলাপ

ভিসানীতি সমানভাবে সব দলের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে : ডোনাল্ড লু

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্র চায় সংলাপ

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করা যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চায় বলে জানিয়েছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি বলেছেন, আমরা বাংলাদেশে সংলাপ চাই। সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ-সবার উদ্যোগ চাই, যাতে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। এটা হতে পারে বাংলাদেশের কঠিন সময়। এই নির্বাচন হতে পারে আনন্দের। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অগ্রগতি হতে পারে এর মধ্য দিয়ে। গতকাল ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড লু এ কথা বলেন। এই সাক্ষাৎকারে লু জানিয়েছেন নতুন ভিসা নীতি সমানভাবে বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী দলের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে। ডোনান্ড লু বলেন, বাংলাদেশটি আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) কাছে খুব স্পেশাল। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক, পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক, প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক আছে। বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রকে উৎসাহিত করা আমাদের নীতি। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, যারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করে। আমাদের নতুন নীতির লক্ষ্য হলো সহিংসতা রোধ করা। আগামী বছরে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করা। আমার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। আমাদের এই নীতি প্রধানমন্ত্রী, সরকার, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও বাংলাদেশিরা যাতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পায়, তার জন্য। লু বলেন, আমি জানি এই নীতি অনেক প্রশ্ন সৃষ্টি করবে। আমি আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরা সবচেয়ে গঠনমূলক এবং ইতিবাচক উপায়ে এই নীতি গ্রহণ করছি। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি খুব পরিষ্কার বলতে চাই, আমরা কারও বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেইনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন নতুন পলিসি ঘোষণা করেছেন। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বজুড়ে নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন গণতন্ত্র। এতে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে কারও বিরুদ্ধে ভিসায় বিধিনিষেধ দিতে পারবে, যাদের মনে হবে যে তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছেন। তিনি হতে পারেন সরকারের, বিচার বিভাগের, আইন প্রয়োগকারী অথবা বিরোধীদলীয় সদস্য। এই নীতি সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যদের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করা হবে। উদাহরণ হিসেবে ধরুন, যদি আমরা দেখতে পাই বিরোধীদলীয় কোনো সদস্য নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে সহিংসতায় জড়িত, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনে জড়িত, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না। একইভাবে আমরা যদি দেখি সরকারি কোনো সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনে জড়িত, সহিংসতায় জড়িত, মুক্ত মত প্রকাশ বাধাগ্রস্ত করছেন, তাহলে ওই সদস্যকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেব না। এই নীতি খুব পরিষ্কার। পরিবারের ঘনিষ্ঠদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানরাও ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় পড়বেন। যাদের ভিসায় এমন বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে, তাদের অবিলম্বে জানিয়ে দেওয়া হবে। সুনির্দিষ্টভাবে চারটি ক্ষেত্র- ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, ভোট জালিয়াতি, মুক্ত মত প্রকাশকে প্রত্যাখ্যান করা ও স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ করায় বাধা, সহিংসতা করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা ব্যক্তিরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবেন বলে জানান লু। এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং গঠনমূলক হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা ব্যবহার করা হবে সরকার ও বিরোধী দলের ক্ষেত্রে সমভাবে। আমরা কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করি না। কোনো বিশেষ প্রার্থীকে সমর্থন করি না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। বুধবার ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বাংলাদেশে চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এর ছয় মাসের বেশি সময় আগেই এলো যুক্তরাষ্ট্রের এই হুঁশিয়ারি। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনে ‘অনিয়ম’ করার দায়ে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে নাইজেরিয়া, উগান্ডা, বেলারুশ, নিকারাগুয়া ও সোমালিয়ার মতো দেশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর