বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বহিষ্কার আমলে নিচ্ছেন না বিএনপির স্থানীয়রা

♦ সিটি নির্বাচনে প্রায় ১০০ প্রার্থী মাঠে ♦ তৈরি হচ্ছে বহিষ্কারের চিঠি ♦ গাজীপুরে বহিষ্কৃত ২৯ জনের ১৪ জনই বিজয়ী

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

চলমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বহিষ্কারের মতো কঠোর নির্দেশনা আমলে নিচ্ছেন না বিএনপির স্থানীয় নেতারা। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রায় ১০০ নেতা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হচ্ছেন। তাদের সমর্থনে কাজ করছেন তৃণমূল কর্মীরাও। এসব নেতা-কর্মীকে শাস্তির ভয় দেখিয়েও বাগে আনতে পারছে না বিএনপির হাইকমান্ড। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোটে অংশ নেওয়ায় ইতোমধ্যে গাজীপুরের ২৯ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে বহিষ্কৃত ১৪ জন গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বিজয়ী হয়েছেন। এদিকে রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল ও খুলনায় যেসব কাউন্সিলর প্রার্থী দলের বাইরে গিয়ে ভোটে অংশ নিয়েছেন তাদের বহিষ্কারের চিঠি শিগগিরই তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। জানা যায়, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তাদের কোনোভাবেই বশে রাখা যাচ্ছে না। ৩ এপ্রিল পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন সমাপ্ত হয়, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ সিটি নির্বাচন নিয়ে কঠোর অবস্থানে অনড় বিএনপি। শুরু থেকেই নেতা-কর্মীদের নির্বাচনে কোনোভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার কথা বলছে বিএনপি। নির্বাচনী মাঠেও থাকবে না দলটির কোনো ‘ছায়া প্রার্থী’। সরকারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ দিতে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এজন্য মেয়র পদে নেই বিএনপির কোনো প্রার্থী। জানা যায়, খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বরিশালে মজিবুর রহমান সারোয়ার ও রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আগের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হলেও দলের নির্দেশে এবার কেউ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীও দলের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অংশ নেননি। বহিষ্কারের খড়গ মাথায় নিয়ে আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচনে অন্তত ২৫ জন নেতা, বরিশালে ১৬, রাজশাহীতে ২০ এবং খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নয়জন কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি নেতারা দলীয় নেতাদের সতর্ক করে বলছেন, সরকার সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে ফাঁদ পেতেছে। বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতেই অত্যন্ত কৌশল করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে বিএনপিকে তাদের পাতানো ফাঁদে আটকাতে চাচ্ছে। তবে বিএনপি সরকারের কোনো ফাঁদে পা দেবে না। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের কিছু প্রার্থীকে জয়ী করে এ সরকার দেখাতে চায় স্বচ্ছ নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা নির্মম। এরা আমাদের কিছু নেতা-কর্মীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কিন্তু সে সুযোগ আমরা দিব না। জানা যায়, ১৪ মে নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে চিঠি দেওয়া হয়েছে সিলেটের ৩২ নেতা-কর্মীকে। এ চিঠি উপেক্ষা করে সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপির অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদের ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। খুলনা সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া অন্তত ১০ জনকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছেন রাজশাহীর ২০ এবং বরিশালের ১৬ জন নেতা-কর্মী। রাজশাহীতে বর্তমানে আটজন করে কাউন্সিলর এবং রাজশাহীতে দুজন মহিলা সংরক্ষিত কাউন্সিলর আছেন।

সর্বশেষ খবর