জনপ্রশাসন খাতে ৫২ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার বরাদ্দ বাড়িয়ে এবং ২ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বিশাল আকারের ঘাটতি রেখে নির্বাচনমুখী বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। এ খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য মোট ২ লাখ ৭০ হাজার ২৭০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। শুধু জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য ৩২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী নিয়ে এত কথা বলা হলেও এ খাতে মাত্র ৬৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ সরকারি হিসাবেই দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছে করোনা মহামারির ধাক্কায়। এদিকে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতিই ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের বেশি। অর্থবছর শেষে এ ঘাটতি আরও কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়েও নানা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এ বাজেটের মূল আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের মূল আকার ধরা হয় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ফেরানোকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে দেশের অর্থনীতি এমনিতেই নানামুখী চাপে রয়েছে। ডলারের সংকট এখনো প্রকট। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারের অরাজকতা, ব্যবসা-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানামুখী চাপ সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের (১৫ বছর) শেষ বাজেটটি ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এত সব চাপ সামনে রেখে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছেন মন্ত্রী।
‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় নির্বাচনের বছরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চাঙা করতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিশাল বর্ণনা তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন তিনি। এবারই প্রথম অডিও ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের আয়ের লক্ষ্য ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা (অনুদান ছাড়া)। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। নানা সংকট সত্ত্বেও উচ্চতর জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করছে সরকার। এজন্য আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীনভাবে চললেও মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে ধরে রাখা লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। অথচ এপ্রিল শেষে মূল্যস্ফীতি ২ অঙ্কের ঘর ছুঁইছুঁই করছে। তবে দীর্ঘ বিরতির পর এবার করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাত নিয়ে ঢাকঢোল পেটানো হলেও এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে খুবই সামান্য। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা ফেরানোকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
বিশাল আকার ঘাটতি অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ ২৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ভরসা করে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও এখন মূল্যস্ফীত ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। শুধু আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমছে; এর ওপর ভর করে ৬ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক নিরাপত্তাবলয় জোরদার করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫৮ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৪ দশমিক ৭৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ লাখ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য খাতে এ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালুর কথা বলা হয়েছে। শিগগিরই পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে কার্যকর করা হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান তৈরির কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন হয়েছে, ২৯টি অঞ্চলে ১৮৭ প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৩৮ প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। ৭০টি নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৩ বিনিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে।
বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আহরণে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ভিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘স্মার্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ গঠনের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বাণিজ্য পরিস্থিতি সামনে রেখে করা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে করদাতাদের প্রকৃত আয় কমেছে। এজন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে। সর্বনিম্ন কর ৫ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে নিট সম্পদ ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ১০ শতাংশ এবং নিট সম্পদ ৫০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ৩৫ শতাংশ সম্পদ কর দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, সাড়ে ১৪ বছর ধরে দেশের উন্নয়ন একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সব মানুষের আশা-প্রত্যাশা ও উন্নয়ন ভাবনার প্রতিফলন ঘটানোর প্রত্যয়ে সাজানো হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট।
বাজেটের অঙ্ক : আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৮৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছর এনবিআরে লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২৭ হাজার ১২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ফলে নিট বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাত থেকে আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর জিডিপির আকার ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।
এনবিআরের চ্যালেঞ্জ : আগামী বাজেটে অবশ্য ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয় আসবে বলে সরকার ধরে নিচ্ছে। এ আয়ের মধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে কর। করের মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত অংশ ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ও এনবিআরবহির্ভূত অংশ ২০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া করবহির্ভূত প্রাপ্তি ৫০ হাজার কোটি টাকা ও অনুদান ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আয় বৃদ্ধির প্রধান উৎস এনবিআর। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩৪ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মাত্র ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য ধরা হলেও গত জুলাই-এপ্রিল সময়ে সব মিলিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশি ব্যাংক ঋণ মানে বেশি টাকা ছাপানো। আর বেশি টাকা ছাপানো মানে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা। সরকার বেশি ব্যাংক ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।
কর কাঠামোর পুনর্বিন্যাস : ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের স্বার্থে প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট করের হার আর না কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। করমুক্ত আয়সীমার নিচে থাকলেও আয়কর বিবরণী দাখিলে টিআইএনধারীকে আগামী অর্থবছর থেকে ২ হাজার টাকা গুনতে হবে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। ২৫১ থেকে ৮০০ সিসি বা তার বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানিতে ১০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কহার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় (সিবিইউ) ফোরস্ট্রোক ২৫০ সিসি পর্যন্ত বাইকের সম্পূরক শুল্কহার ৬০ শতাংশ করতে চায় সরকার।
ধনীদের সম্পদের ওপর সারচার্জের ক্ষেত্রে আবার ছাড় দিলেন অর্থমন্ত্রী। এত দিন ৩ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলেই সারচার্জ দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। আগামী বছরের বাজেটে এ সীমা বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে যে ৪ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে বাধ্যতামূলকভাবে সারচার্জ দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাব অনুযায়ী, নিট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে হলে ওই ব্যক্তির করের ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে কিংবা নিজ নামে একাধিক গাড়ি কিংবা ৮ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের গৃহ-সম্পত্তি থাকলেও ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। এদিকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করা সম্ভব হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এই সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে প্রবাসীরাও যুক্ত হতে পারবেন।
ঘাটতি পূরণের প্রধান উৎস ব্যাংক : আগামী বাজেটের ঘাটতি থাকছে অনুদান ছাড়া ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণ (অর্থ সংস্থান) করা হবে দুভাবে বৈদেশিক ঋণ ও অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়ে। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে নিট ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, আর সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্বনেতাদের উদ্ধৃতি : বাজেট বক্তৃতায় শুরুর দিকে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের করা বিভিন্ন উক্তি তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশ হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদাহরণ। বাংলাদেশ হচ্ছে একটি প্রত্যাশা ও সুযোগ-সুবিধার দেশ। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বক্তব্য তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রয়েছে অবিশ্বাস্য রকম উন্নতির উদাহরণ। এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বকে তার গতিশীলতা দেখাচ্ছে।
বাজেট পেশের আগে জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট অনুমোদন দেন। নিয়মানুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এতে স্বাক্ষর করেন। সবুজাভ জামদানি পরিহিত হাস্যোজ্জ্বলরত সপ্রতিভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবির সঙ্গে কালো রঙের জুতা পরিহিত মেরুন রঙের ব্রিফকেস হাতে অর্থমন্ত্রী ছিলেন বেশ হাস্যোজ্জ্বল। এরপর বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি অতিথি, কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা গ্যালারি থেকে বাজেট অধিবেশন ও উপস্থাপনা প্রত্যক্ষ করেন।