শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার ২০তম বাজেট

রফিকুল ইসলাম রনি

শেখ হাসিনার ২০তম বাজেট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল বাজেট উপস্থাপনের জন্য সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন -পিআইডি

রেকর্ড হয়ে গেছে আরও আগেই। এখন ক্রমান্বয়ে এ সংখ্যা বেড়েই চলছে। সরকারপ্রধান হিসেবে ২০ বার বাজেট দিয়ে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বাজেট পেশ করেছে ২৪ বার। আর ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার টানা ১৫ বার বাজেট দিয়েছে। বাজেট ঘোষণায় আওয়ামী লীগের পরই রয়েছে বিএনপি। তিন মেয়াদে দলটির নেতৃত্বাধীন সরকার ১৬টি বাজেট দিয়েছে। আর জাতীয় পার্টি দিয়েছে ৯টি। জনগণের আস্থার কারণেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বাজেট পেশের রেকর্ড করতে পেরেছে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। গতকাল বিকালে জাতীয় সংসদে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এই বাজেট শেখ হাসিনা সরকারের নির্বাচনী বাজেট। বাজেট পেশ করার পর রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতৃত্বগুণে ভোটের আগে জনবান্ধব, গণমুখী এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সহায়ক বাজেট পেশ করার মধ্য দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১২ জন ৫১টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০ জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট পেশ করে। অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থাপিত সেই প্রথম বাজেটটি ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। এরপর ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালেও তিনি বাজেট পেশ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সরকারের দ্বিতীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে ড. এ আর মল্লিক দেশের চতুর্থ বাজেট উপস্থাপন করেন। এটিই ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের শেষ বাজেট। ওই বাজেটের আকার ছিল ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা আসে। পরে ১৯৯৭ সালের ২৮ জুলাই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ঘোষণা করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম বাজেট। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরের ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকার সে বাজেট তৎকালীন সরকারের শেষ বছরে গিয়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এলে প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যা পরবর্তী কয়েক অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে বেশ বড় আকার নেয়। নবম জাতীয় সংসদের শেষ বাজেটেই রেকর্ড ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ক্ষমতায় এসে তৃতীয়বারের মতো অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন আড়াই লাখ কোটি টাকার ওপরে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পঞ্চম মেয়াদের প্রথম বাজেট দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট দেন। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য তৃতীয়বারের মতো ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। বাজেট অধিবেশনে ছিল রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশ। অতীতের মতো কোনো রাজনৈতিক দলের বর্জন নয়, বরং নিকট ইতিহাসে সরকার ও বিরোধী দলের সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক দলের জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ ও দেশের ৫২তম বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শুধু অধিবেশনই নয়, দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম এই বাজেট উপস্থাপন প্রত্যক্ষ করতে ভিভিআইপি, ভিআইপি, দর্শক গ্যালারি সবকিছু ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ।

গতকাল বাজেট পেশ করার পর আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এবারের বাজেট হলো জনবান্ধব বাজেট। এই বাজেটে মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। সংকটের মধ্যেও স্বস্তির এ বাজেট। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাজেট এমনভাবে করা হয়েছে, মানুষের কষ্টটা লাঘব হবে। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে এ বাজেট প্রণীত হয়েছে।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এই বাজেটের মাধ্যমে সেই স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট নগরায়ণ এবং স্মার্ট জনগণ গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জনবান্ধব সরকার। জনগণের কথা চিন্তা করেই সরকার এই বাজেট দিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ হয়েছে, এখন স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর