সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

দাবদাহে পুড়ছে দেশ প্রাইমারি স্কুলে ছুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দাবদাহে পুড়ছে দেশ প্রাইমারি স্কুলে ছুটি

এপ্রিলজুড়ে তীব্র দাবদাহ ভুগিয়েছে দেশবাসীকে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মে মাসে ঝড়বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও জুনে এসে ফের খরতাপে পুড়ছে দেশ। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৪১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এপ্রিলের তুলনায় জুনে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি। শরীরে প্রচুর ঘাম হচ্ছে, যা অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। একই সঙ্গে প্রচ- গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বাড়ায় দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়েছে। বর্তমানে দেশের অর্ধেকের বেশি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আরও পাঁচ-ছয় দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। দাবদাহের কারণে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। এর আগে তীব্র দাবদাহের কারণে গত শনিবার অনুষ্ঠেয় বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সব খেলা স্থগিত করা হয়েছিল। গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও বান্দরবানের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। কিশোরগঞ্জের নিকলী, রংপুর, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, ফেনী, রাঙামাটি ও কুমিল্লায় ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হলেও সারা দেশ ছিল শুষ্ক। তবে আজ ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গুগলের তথ্য বলছে, অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে গরম অনুভূত হচ্ছে ৫-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সবার। সবচেয়ে বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে কাজকর্ম। বাইরে বের হলে প্রখর রোদের সঙ্গে গরম বাতাসের ঝাপটায় চোখ, মুখ জ্বালাপোড়া করছে। ঘরের ভিতরে ফ্যান চালালেও গরম বাতাসে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এর মধ্যেই দফায় দফায় হচ্ছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ গেলে ক্ষণিকের মধ্যেই ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিশুদের নিয়ে বিপাকে আছেন অভিভাবকরা। খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা রুকাইয়া বলেন, বিদ্যুৎ গেলেই তার দেড় বছরের বাচ্চার কান্না সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। ঘেমে বারবার ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে। গত ১০-১২ দিন ধরে সর্দি-কাশির ওষুধ খাইয়েই যাচ্ছি। এক দিন ভালো থাকলে ফের ঠান্ডা-কাশি হচ্ছে। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ যাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি শুরু করছে বাচ্চা। এদিকে গরমের কারণে ফ্যান ও এসির ব্যবহার বাড়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। পিকআওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা সংকটে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বৃহত্তম পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আজ থেকে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা দুই দিন আগেই জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গতকাল (৪ জুন) রাত ১টায় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৪৫০  মেগাওয়াট। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ২৮৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ৩ হাজার ২৪ মেগাওয়াট। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হলে বিদ্যুৎ সংকট আরও বাড়বে। গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে বেড়েছে চার্জার ফ্যান ও আইপিএস বিক্রি।  বেড়ে গেছে দামও। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন ইলেকট্র্রনিক্সের দোকানে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতার ভিড়। অনেক দোকানদার পণ্য না থাকায় অগ্রিম অর্ডার নিয়ে রাখছেন। এদিকে যশোরের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান মাসুম জানান, প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের আইপিএস যশোরের বাজারে নেই বললেই চলে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম। কিছু বিক্রেতা স্থানীয়ভাবে আইপিএস তৈরি করে বিক্রি করেন। তবে ব্যাটারি সংকটে তাও পারছেন না।

সর্বশেষ খবর