বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

গরমে অসুস্থ শিক্ষার্থীরা, বন্ধ মাধ্যমিক স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

তীব্র গরমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন শিক্ষা প্রশাসন মাধ্যমিক পর্যায়ের সব প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। তাই আজ বন্ধ থাকবে সব স্কুল। গতকাল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে তীব্র দাবদাহের কারণে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংযুক্ত প্রাথমিক শাখার শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম ৮ জুন (আজ) পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তার কারণে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকার্যক্রম ৮ জুন বৃহস্পতিবার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাজধানীতে অসুস্থ ছয়জন : গতকাল সকালে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছয় ছাত্রী তাপপ্রবাহের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের পাশের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।

দাউদকান্দিতে তীব্র দাবদাহে ২০ শিক্ষার্থী অসুস্থ : দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল তীব্র দাবদাহে ২০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। অসুস্থ সবাই গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থী। বিভিন্ন কক্ষে ক্লাস চলাকালে তীব্র দাবদাহে তারা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্কুলের শিক্ষকরা অন্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম মিয়া বলেন, প্রতি শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা থাকলেও স্কুল চলার সময় লোডশেডিং চলছিল। ফলে তীব্র দাবদাহের কারণ ছাত্রছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান বলেন, ২০ শিক্ষার্থী তীব্র দাবদাহে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে আনা হয়েছে। চিকিৎসা চলছে। তারা আশঙ্কামুক্ত। এদিকে মঙ্গলবার একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার (১২) শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তবে কী কারণে ছাত্রীর মৃত্যুর হয়েছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

তীব্র তাপপ্রবাহ ছয় জেলায়, কিছু স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা, সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সংকেত : দেশের অধিকাংশ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে রয়েছে রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, যশোর ও চুয়াডাঙ্গার মানুষ। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ও বাকি সাত বিভাগের দুই-এক জায়গায় আজ অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা আজ কিছুটা কমতে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা কমার কোনো সুখবর আপাতত নেই। গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতর এমন পূর্বাভাস দিয়েছে।

এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত থাকায় সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছধরা নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও বরিশাল ছাড়া বাকি চার বিভাগেই গতকাল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গতকাল সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ, রাঙামাটি, হাতিয়া, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, বান্দরবান, পটুয়াখালী ও ভোলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঢাকার আকাশে বিকালের দিকে কিছুটা মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টির দেখা মেলেনি।

এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ গতকাল জানিয়েছেন, আগামী শনিবার পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আজ ও আগামীকাল রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, মাগুরা জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।

তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সবার। বাইরে বের হলে প্রখর রোদের সঙ্গে গরম বাতাসের ঝাপটায় চোখ, মুখ জ্বালাপোড়া করছে। ঘরের ভিতরে ফ্যান চালালেও শরীর ঘামছে। এর মধ্যেই দফায় দফায় লোডশেডিং ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। বিদ্যুৎ গেলে ক্ষণিকের মধ্যেই ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। গভীর রাতে লোডশেডিংয়ে ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করছে শিশু। গতকাল রাজধানীর সড়কগুলোতে ৭০-৮০ টাকা দরে তালপাখা বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জার ফ্যান, সোলার সিস্টেম ও আইপিএস কেনার ধুম পড়েছে। বেড়ে গেছে দামও। বাজারে ভালো মানের চার্জার ফ্যানের সংকট দেখা দিয়েছে। খিলক্ষেত এলাকার কয়েকটি দোকান ঘুরে গতকাল কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের চার্জার ফ্যান পাওয়া যায়নি। দোকানিরা জানান, গত ৫-৭ বছরের মধ্যে চার্জার ফ্যান ও আইপিএসের এত চাহিদা তারা দেখেননি। অগ্রিম অর্ডার রেখে কোম্পানিগুলোকে ১০টি ফ্যানের চাহিদা দিলে আসছে ৫-৬টি। একই চিত্র ঢাকার বাইরেও। যশোরের ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মাসুম জানান, প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের আইপিএস যশোরের বাজারে নেই বললেই চলে। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম। কিছু বিক্রেতা স্থানীয়ভাবে আইপিএস তৈরি করে বিক্রি করে। তবে ব্যাটারি সংকটে সেটাও পারছেন না।

সর্বশেষ খবর