শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলেও জ্বালানির ব্যবস্থা করা হয়নি

------ মোল্লাহ আমজাদ হোসেন

বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলেও জ্বালানির ব্যবস্থা করা হয়নি

জ্বালানিবিষয়ক সাময়িকী ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’-এর সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন বলেছেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কীভাবে চলবে সে পরিকল্পনা করা হয়নি। গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

মোল্লাহ আমজাদ বলেন, সরকার ২০১০ থেকে ২০২৩-এর মধ্যভাগ পর্যন্ত এ সাড়ে ১৪ বছরে প্রচুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেছে। ৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে শুরু করে ২৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত গ্রিড কানেক্টেড ইলেকট্রিসিটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এজন্য জ্বালানির ব্যবস্থা করা হয়নি। তিনি বলেন, সরকারের প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১০ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতের মাস্টারপ্ল্যান, কয়লানীতি, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিমালা এটা কখনো সমন্বিতভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এ পরিকল্পনা পাশ কাটিয়ে যখন যার যেখানে ইচ্ছা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেছে। আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির পর দেখা গেছে লাইন নেই। মোল্লাহ আমজাদ বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত যখন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন সমান্তরালভাবে হয়েছিল। ফলে তখন বিদ্যুৎ ঘাটতিও মোকাবিলা করা গেছে এবং জ্বালানি সংকটও দেখা দেয়নি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সে সময় আমরাও বলে এসেছি যে, বাংলাদেশের মতো দেশে ২০৩০ বা ২০৪০ সাল পর্যন্ত নিজস্ব জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২০৩০-এ অন্তত ৫০ শতাংশের মধ্যে রাখা এবং ২০৪০-এ গিয়ে ৪০ শতাংশের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার। কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণের পুরো দায় যেন বাংলাদেশ নিয়েছে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই আমরা নিজস্ব কয়লা উত্তোলন করিনি। আর এ কয়লা উত্তোলন না করায় আমরা আমদানিনির্ভর কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। কিন্তু আমাদের নিজস্ব কয়লা যদি পরিকল্পিতভাবে উত্তোলন করা যেত তাহলে এটি দিয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অন্তত ৪০ বছর পর্যন্ত উৎপাদন করা যেত। আর এমনটি করা গেলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে হতো না। আর গ্যাস তখন শিল্পে ব্যবহার করা যেত। সে ক্ষেত্রে দেশে আর একটু দেরিতে এলএনজি আমদানি করলেও চলত। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের পর দেশে আর বড় কোনো গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। দেশে ধীরে ধীরে গ্যাসের উৎপাদনও কমে আসছে। এখন ইমিডিয়েট সলিউশন হিসেবে ভোলার গ্যাস ১৮ বা ২৪ মাসের মধ্যে গ্রিডলাইনে আনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প নিয়ে পাইপলাইন করতে হবে। এ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস গ্রিডে সরবরাহ করতে হবে। বর্তমানে দেশের যে অবকাঠামোগত সুবিধা আছে তাতে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস আমদানি করা যাবে না। আবার নতুন এলএনজি টার্মিনাল হতে আরও ২৪ মাস লাগবে। এজন্য এলএনজি আমদানি বাড়ানো যাবে না। আর ল্যান্ড বেইজড টার্মিনাল তৈরি করতে কমপক্ষে ৪৮ থেকে ৬০ মাস লাগবে। এজন্য গ্যাস আমদানি বাড়াতে হলেও বাড়তি সময় লাগবে। এ সময়ে আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও এলএনজি আমদানি করা যাবে না। স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসেছে।

এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় জ্বালানি ক্রাইসিসগুলো নিজে উদ্যোগ নিয়ে মোকাবিলা করেছেন। বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে ধারণা করছি, প্রধানমন্ত্রীকেই শক্ত হাতে জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। কিন্তু এর পরও দুই সপ্তাহ বা এক মাসে যে এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যাবে তা আমি মনে করি না। কিন্তু এখন থেকেই যদি উদ্যোগ নেওয়া যায় তাহলে আগামী গ্রীষ্মকালে আমরা হয়তো ভালো অবস্থায় থাকব।

সর্বশেষ খবর