রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে সহিংসতা বাড়ছে। শহর-নগর বা গ্রামে-গঞ্জে কথায় কথায় হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে হত্যা, আহত, বাড়িঘর ভাঙচুরসহ জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। মামলা-পাল্টা মামলা হচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বেশির ভাগ সহিংসতার ঘটনা ঘটায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই ঘটা এসব ঘটনার বেশির ভাগ বীভৎস ও রোমহর্ষক। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপন স্বজনরাই বেছে নিচ্ছেন খুনের মতো নিকৃষ্ট পথ। স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে, স্ত্রী খুন করছে স্বামীকে, মা খুন করছে সন্তানকে, সন্তান খুন করছে মা-বাবাকে, স্বামী পুড়িয়ে মারছে স্ত্রীকে, ভাই খুন করছে ভাইকে। খুনের পরে বীভৎস লাশগুলো নাড়িয়ে দিচ্ছে মানুষের বিবেক। মূলত সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই সহিংসতা বাড়ছে। চলতি মাসেও দেশের বিভিন্ন জেলায় হত্যা, ধর্ষণসহ সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ২৪০টি দেশ ও অঞ্চলের সংঘাত ও সহিংসতার তথ্য সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্টের (এসিএলইডি) একটি তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২২ নম্বরে। সম্প্রতি প্রকাশিত এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মিয়ানমার। এরপরই রয়েছে যথাক্রমে সিরিয়া, মেক্সিকো, ইউক্রেন ও নাইজেরিয়া। তালিকার শেষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তালিকায় বাংলাদেশের আগে ২১ নম্বরে রয়েছে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। আর বাংলাদেশের পরে ২৩ নম্বরে রয়েছে কেনিয়া।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ২৯২ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ জনকে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। দেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৬ আগস্ট আসক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর প্রথম সাত মাসে ৬১৮ জন শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৪টি ধর্ষণের ঘটনা। এ সময়ে ৩৫৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৫ জনকে। এ বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৯৯ জন নারী। এর মধ্যে ১৩৪ জন নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পর্যটন স্পট বারেকটিলায় বেড়াতে গিয়ে এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ অভিযোগে শামীম মিয়া নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বুধবার ভুক্তভোগী তরুণী তার বান্ধবীসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে তাহিরপুর থানায় মামলা করেন।গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়া এলাকায় চোর সন্দেহে আকাশ (১৪) নামে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মো. জহুরুল ইসলাম বাবু ও মো. আবদুল বারেক নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ বলছে, চোর সন্দেহে নিরাপত্তাকর্মী ও নির্মাণ শ্রমিকরা আকাশকে আটক করে মারধর করে। এ ঘটনায় তারা ভিডিও ধারণ করে এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এটা ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় আকাশের ফুফু মালতি আক্তার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। ২১ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান সি ব্লকে বিনা অপরাধে এক কিশোরকে পিটিয়ে আহত করে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সুমন ওরফে রগকাটা সুমন। পাশের বাড়ির কেয়ারটেকার কিশোরটিকে রক্ষার চেষ্টা করায় ক্ষিপ্ত সুমন ওই কেয়ারটেকারের হাতে-পায়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ জানায়, সন্ত্রাসী সুমনের বিরুদ্ধে ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানায় ১০টি মামলা আছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর নরসিংদীতে নদীর ঘাটের ইজারা ও নৌকার সিরিয়াল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ছুরি ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে সাজিন নামে এক স্কুলছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আরও পাঁচজন গুরুতর আহত হন। নিহত সাজিন কাউরিয়াপাড়ার আমির হোসেনের ছেলে। সে আলীজান জেএম একাডেমির অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল।