উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়া নিয়ে আইনি আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে হলে আবার জেলে যেতে হবে। এরপর আদালতে আবেদন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্যের পরেও সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে করা আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মিলবে- এই আশায় বসে আছেন তারা। আইনমন্ত্রী এ বিষয় নিয়ে আজ মতামত জানাতে পারেন। বিদেশে পাঠানোর আবেদনের বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তবে বেগম জিয়া কোনো শর্ত মেনে বিদেশে যেতে চান না বলে জানিয়েছে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র। বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যাতে তাঁকে বিদেশে নেওয়া যায়, সেই প্রস্তুতিও রয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র অথবা জার্মানি নিতে আগ্রহ পরিবারের সদস্যদের। ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি নতুন যে আবেদন করা হয়েছে, সেটা সরকার মানবিকভাবে দেখবেন এবং এটা আইনিভাবেই সম্ভব। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে নিজের চেম্বারে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়া মোকাবিলা করেই বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে। কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। সেগুলো মোকাবিলা করতে হবে। দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবারের দরখাস্ত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতির আবেদনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আজ (রবিবার) জানানো হবে। আমরা আজ মতামত দিয়ে ফাইল ছেড়ে দেব। ভয়েস অব আমেরিকাতে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বলতে গেলে তিনি এখন মৃত্যুশয্যায়। কিন্তু তাঁকে মুক্তি দিচ্ছে না সরকার। বাইরের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দেওয়ার দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত তাঁকে তাঁর পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েই গত সোমবার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। তবে সরকারের কোনো শর্ত মেনে নিয়ে বিদেশে যেতে চান না বেগম খালেদা জিয়া। হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় থেকেও দলীয় নেতাদের সরকারের শর্ত মেনে রাজি হতে নিষেধ করে দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে বিনা চিকিৎসায় দেশের ভেতরেই আমার মৃত্যু হবে। তবুও আপনারা কোনো শর্ত মানবেন না। জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার বার্তা দেওয়া হলেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে জার্মানিতে চিকিৎসা করাতে চাচ্ছে তাঁর দল বিএনপি। শুক্রবার গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এদিকে দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আরও বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী একটি পাবলিক স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চাইলে পরিবারের পক্ষ থেকে একটা আবেদন করতে হবে। মন্ত্রীর সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পরিবার থেকে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর একটি আবেদন করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেছেন, যে শর্তে খালেদা জিয়াকে দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, বিদেশে যেতে হলে আগের আদেশ থেকে ‘শর্তযুক্ত’ শব্দটি বাতিল করতে হবে। আর এই শব্দটি বাতিল করতে হলে তাকে জেলে যেতে হবে। তার আগে তাকে আদালতে যেতেই হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনও বলেছেন, খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে যেতে হলে আরেকটা দরখাস্ত করতে হবে। সেই দরখাস্ত যদি করা হয় তাহলে আগের অর্ডারটা বাতিল করতে হবে। বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে জটিলতা আছে। বাতিল হলে তো তিনি বাইরে থাকতে পারবেন না। এগুলো আইনি জটিলতার বিষয়। তবে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক এর আগে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আদালতের আলাদা অনুমতির কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ তাঁর মুক্তি দেওয়া হয়েছে নির্বাহী আদেশে। কাজেই বাকি সব পদক্ষেপও এ আদেশের আওতায়ই হওয়া সম্ভব।