পঞ্চম দফায় বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিনে গতকাল রাজধানীতে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে নাশকতার অভিযোগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ৪৩ জন এবং র্যাব ৩১ জনকে গ্রেফতার করেছে। অবরোধের তেমন প্রভাব পড়েনি রাজধানীর জনজীবনে। সকাল থেকে যান চলাচল ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। তবে দূরপাল্লার বাস খুব একটা ছাড়েনি। হাতে গোনা কয়েকটি বাস টার্মিনাল ছেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোতায়েন ছিল পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং গ্রেফতার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডাকে বিএনপি। অবরোধের সমর্থনে নগরীতে মিছিল করেছে বিএনপি, সমমনা দল ও জোট এবং জামায়াতে ইসলামী। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত মিছিল করেছে বিএনপির মহিলা দল। মিছিলে অংশ নেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক সহিংসতা ও নাশকতা প্রতিরোধ এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীতে দেড় শতাধিক টহলসহ সারা দেশে র্যাবের সাড়ে ৪ শতাধিক টহল দল মোতায়েন ছিল। পোশাক কারখানার নিরাপত্তা জোরদারে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় ৩৩ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন থাকে। এ ছাড়া সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৮১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন করা হয়। জানা গেছে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে শাহবাগ থেকে বাংলামোটর অভিমুখী সড়কে পিকেটিং ও সড়ক অবরোধ করা হয়। ১৮ দিন পর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে কয়েকজন নেতা-কর্মী অবরোধের সমর্থনে স্লোগান দেন। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। গুলশানে অবরোধ সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদল। এ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। অবরোধের সমর্থনে হাই কোর্ট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। বিজয়নগর ও পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ সমমনা দল ও জোট। উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুর ১১ নম্বর এলাকায় মোহনা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এদিকে অবরোধকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বগুড়ায় সংঘর্ষে বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে অবরোধের সমর্থনে বিএনপির মিছিল এবং আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করেছে। এ সময় ৩০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। নাটোরের গুরুদাসপুরে কাভার্ড ভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করেছে ছাত্রদল। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য। বগুড়া : জেলার শেরপুর উপজেলায় অবরোধের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল করা নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে শেরপুর থানার ওসি, আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম : অবরোধের সমর্থনে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কর্মসূচি পালনকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। নাটোর : জেলার গুরুদাসপুরে আগুনের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের আড়ইমারি ব্রিজ এলাকায় প্রাণ কোম্পানির একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেয় ২০-২২ জন যুবক। পটুয়াখালী : পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে কলেজ শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
গতকাল ভোর ৬টার দিকে অবরোধের সমর্থনে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হয়ে দুই গেটে ছাত্রদল লেখা তালা ঝুলিয়ে ব্যানার সাঁটিয়ে চলে যান।
জানা যায়, পটুয়াখালী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক বেলাল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল হোসেন এবং মেহেদী হাসান রাকিবের নেতৃত্বে গতকাল ফজরের নামাজের পর ৪-৫ জন ছাত্রদলের নেতা-কর্মী কলেজের পেছনের গেটে ও প্রধান ফটকের গেটে ব্যানার সাঁটিয়ে তালা ঝুলিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।