মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পুরনো বিভাগেই থাকছেন ওসিরা প্রথম ধাপে বদলি ৪৭ ইউএনও

আসছে এসপি বদলের সিদ্ধান্ত

সাখাওয়াত কাওসার

পুরনো বিভাগেই থাকছেন ওসিরা। কর্মস্থলের সর্বোচ্চ বদল হতে পারে অন্য জেলায়। সে ক্ষেত্রে বিভাগের মেট্রোপলিটন কিংবা রেঞ্জেই থাকা হচ্ছে তাদের। তবে সুবিধাজনক থানায় যাওয়ার তদবির অব্যাহত রেখেছেন তারা। ভিড় জমাচ্ছেন রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন কমিশনারের কার্যালয়ে। নানা কৌশলে উপস্থাপন করছেন বিভিন্ন যুক্তি। প্রয়োজনে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ফোন করাতেও বাদ দিচ্ছেন না বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে পুলিশ সুপার পরিবর্তনের বিষয়টিও জোর বিবেচনায় রেখেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী সপ্তাহের শুরুতে এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছেন, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে একই স্টেশনে থাকা ওসিদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সেই তালিকা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৬ জনে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) ৩৩, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে (সিএমপি) পাঁচ, রংপুর মহানগর পুলিশে (আরএমপি) পাঁচজন ওসি রয়েছেন। তবে গতকাল নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে ওসি বদলের সময় আরও তিন দিন বাড়ানোর চিঠি ইস্যু হয়েছে। গতকাল ইসির উপসচিব মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো হয়। পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশনা দেবে সে আলোকেই কাজ হবে। এখন এসপি পরিবর্তনের নির্দেশনা দিলে তাই করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

গতকাল তিনটি মহানগর পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁদের তিনজনের তথ্যও অনেকটা একই রকম। তাঁরা বলছিলেন, তালিকায় থাকা তাঁদের মহানগরের ওসিদের রেঞ্জে বদলির বিষয়টি তাঁরা চূড়ান্ত করেছেন। একই সঙ্গে তাঁদের মেট্রোপলিটনে একই বিভাগের রেঞ্জ ইউনিট থেকে আসবেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের সব থানার ওসিদের বদলির সিদ্ধান্ত জানিয়ে বৃহস্পতিবার ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের নিমিত্ত সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাদের অন্য জেলায় বা অন্যত্র বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করা প্রয়োজন।’ তবে পরে গতকাল বদলির সময় বৃদ্ধি করে আরেকটি চিঠি ইস্যু হয় ইসি থেকে।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের তালিকাটি পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। এখন নির্বাচন কমিশন থেকে ফিরতি চিঠি না আসা পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা যাবে না।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, সাধারণত দুই বছরের জন্য ওসিদের থানায় নিয়োগ দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দফতর থেকে পরিদর্শকদের বদলি করে মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জে পাঠানো হয়। এরপর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজির আদেশে থানায় ওসিদের পদায়ন হয়। এই ওসি বদলি ও পদায়নে পুলিশ সদর দফতরে একটি নীতিমালা রয়েছে, যা সব সময় অনুসরণ করা হয় না। এর অন্যতম উদাহরণ ডিএমপি। ঘুরেফিরে একই ব্যক্তিরাই ডিএমপিতে নানা কৌশলে অবস্থান করছেন।

প্রথম ধাপে বদলি ৪৭ ইউএনও : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে পুলিশ ও প্রশাসনে ধারাবাহিক বদলির অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ৪৭ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এক জেলায় দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে অন্য জেলায়। ওসিদের তালিকা ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠাতে বলা হলেও আরও তিন দিন বাড়িয়ে ৮ ডিসেম্বর করা হয়েছে। গতকাল এ তথ্য জানান কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ৬৪ জেলা প্রশাসক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন। এরই মধ্যে জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, আইজিপি, জনপ্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে প্রশাসন ও পুলিশের বদলির বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরই অংশ হিসেবে বর্তমান কর্মস্থলে এক বছরের বেশি সময় ধরে থাকা ইউএনও এবং ছয় মাসের বেশি সময় ধরে থাকা ওসিদের তালিকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ২৭০ ইউএনও এক বছরের বেশি এবং ৩২০ ওসি ছয় মাসের বেশি বর্তমান কর্মস্থলে থাকতে পারেন বলে তারা মনে করছেন। এখন ৪৭ ইউএনওর তালিকা এসেছে। কমিশন তাদের বদলির বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এই কর্মকর্তা জানান, চার নির্বাচন কমিশনার বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যে তথ্য পেয়েছেন, তার ভিত্তিতেই থানার ওসি ও ইউএনওদের বদলি চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। সব মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, যে কোনো কর্মকর্তা দায়িত্বে অবহেলা ও পক্ষপাতমূলক আচরণ করলেই প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু দৃষ্টিগোচর হয়নি। কোনো প্রার্থী নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি ঘটালে প্রমাণ সাপেক্ষে তার প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির অঙ্গীকারও করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর