শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারি

ভোটের মাঠে ২৯ ডিসেম্বর নামছে সশস্ত্র বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের মাঠে ২৯ ডিসেম্বর নামছে সশস্ত্র বাহিনী

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মাঠে সশস্ত্রবাহিনী, পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন ১৩ দিন। ৭ জানুয়ারি  হবে ভোট গ্রহণ; এর আট দিন আগে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানের জারি করা এক পরিপত্রে এমন নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাঠানো হয়েছে। এদিকে আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সব ধরনের প্রচারণা এমনকি মিছিল করার ওপরও নিষেধাজ্ঞা থাকছে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভোট কেন্দ্র প্রতি ১৫-১৭ জন নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবে। স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করবে সশস্ত্রবাহিনী। ভোটের আগে-পরের ১৩ দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনী মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আনসার-ভিডিপিসহ ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা সদস্যরা ভোটের আগের দুই দিন ও পরের দুই দিন মিলিয়ে পাঁচ দিন নিয়োজিত থাকবেন।

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কমিশনের ভেটিং শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে মন্ত্রণালয় এ পরিপত্র জারি করেছে। অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এবার ৫ লাখ ১৬ হাজার আনসার সদস্য, ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য, ২ হাজার ৩৫০ কোস্টগার্ড সদস্য এবং ৪৬ হাজার ৮৭৬ বিজিবি সদস্য থাকবেন।

পরিপত্রে বলা হয়, ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা মেট্রোপলিটন এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ও পার্বত্য এবং দুর্গম এলাকার সাধারণ ভোট কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৫-১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৬-১৭ জন পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তবে রিটার্নিং ককর্মকর্তা চাইলে সংখ্যা বাড়াতে বা কমাতে পারবেন।

যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। ৬ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল করতে পারবে না। ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করতে পারবেন না কেউ। তবে নির্বাচনে প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচনি এজেন্টদের জন্য এ নির্দেশ প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়কেও এটি প্রযোজ্য হবে না। ভোট গ্রহণের আগের ৪৮ ঘণ্টা ও পরের ৪৮ ঘণ্টা মিছিল-মিটিং ও শোভাযাত্রা করা যাবে না।

৫ থেকে ৯ জানুয়ারি প্রচারণা-মিছিল নিষিদ্ধ : সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সব ধরনের প্রচারণা এমনকি মিছিল করার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৮ অনুসারে কোনো নির্বাচনি এলাকায় ভোট গ্রহণ শুরুর আগের ৪৮ ঘণ্টা এবং ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা আয়োজন বা তাতে যোগদান না করার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোট গ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টায়। এ হিসেবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। এদিকে ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে কোনো প্রার্থী নির্বাচন ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে।

৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন-প্রদর্শন নিষিদ্ধ : সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া নির্দেশনার আলোকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখার উপ-সচিব ইসরাত জাহানের গতকাল স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঘোষিত তফসিল অনুসরণে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।

নির্বাচনের দিন দুর্গম এলাকায় যাবে হেলিকপ্টার : সংসদ নির্বাচনে পার্বত্য ও দুর্গম অঞ্চলের এলাকায় নির্বাচনি মালামাল ও নির্বাচনি কর্মকর্তাদের যাতায়াতে থাকবে হেলিকপ্টার। এক্ষেত্রে পার্বত্য ও দুর্গম অঞ্চলের তালিকায় দেশের ৭২  উপজেলা রয়েছে। পরিপত্রে  বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণের দিন এবং তার আগে ও পরে পার্বত্য-দুর্গম অঞ্চলে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টারের প্রয়োজন হবে। সেসব এলাকার ভোট কেন্দ্রগুলোর নির্বাচনি কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য এবং নির্বাচনি দ্রব্যাদি পাঠাতে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকে নির্বাচনের কয়েকদিন পর পর্যন্ত হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রদানের জন্য সশস্ত্রবাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পক্ষপাতদুষ্ট কাউকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা করা যাবে না : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দিতে বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে বলা হয়, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সাহসী ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রথম শ্রেণি/সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগে অগ্রাধিকার প্রদান ও পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর