বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

থমকে গেছে বাংলায় রায় অনুবাদের কার্যক্রম

আরাফাত মুন্না

নিম্ন আদালতে সব কাজ বাংলায় হলেও উচ্চ আদালতে আবেদন দাখিল থেকে রায় পর্যন্ত, প্রায় সবই হয় ইংরেজিতে। হাতে গোনা কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় লিখলেও ইংরেজিতেই রায় ও আদেশ লিখেন অধিকাংশ বিচারপতি। তাই রায় ও আদেশ সাধারণ মানুষের বোধগম্য করতে বাংলায় অনুবাদের উদ্যোগ নেন সুপ্রিম কোর্ট। এ লক্ষ্যে ২০২৩ সালে ‘আমার ভাষা’ নামে একটি সফটওয়্যারের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা রায় ও আদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুবাদে একটি প্রযুক্তি উদ্বোধন করা হয় গত বছর। তবে দুটি কার্যক্রমই এক প্রকার থমকে গেছে।

আইনজ্ঞরা বলেন, চাইলেই সুপ্রিম কোর্টের সব রায় ও আদেশ বাংলায় সময়সাপেক্ষ বিষয়। তবে অনুবাদের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয় ছিল। অনুবাদের উদ্যোগ থমকে থাকাটা দুঃখজনক। তাঁদের আশা, সংকট কাটিয়ে দ্রুত রায় অনুবাদের কার্যক্রমে গতি ফিরবে।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানিয়েছে, আমার ভাষা সফটওয়্যারের মাধ্যমে রায় বা আদেশ অনুবাদের জন্য আলাদা কোনো সেল বা শাখা নেই। সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান জনবল দিয়েই চলছে এ অনুবাদ কার্যক্রম। সূত্র জানায়, লোকবল সংকটের কারণে সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনুবাদের কার্যক্রম খুব ধীরগতিতে চলছে। তিন বছরে মাত্র ৩৪টি রায় অনুবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে আপিল বিভাগের ১১টি এবং হাই কোর্ট বিভাগের ২৩টি রায় অনুবাদ করা হয়েছে। অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গুগলের সহায়তায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে সংযুক্ত করা স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ প্রযুক্তি কাজে আসছে না। সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত সব রায়-আদেশ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী বা যে কেউ বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারার কথা। তবে বর্তমানে ওয়েবসাইটের ওই অপশনে প্রবেশ করতে গেলে এরোর (ত্রুটি) দেখায়। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব উদ্যোগে এই প্রযুক্তিটি সচল করা হলেও এরপর থেকে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ফলে এখন আর তা কাজে আসছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার ভাষা সফটওয়্যারের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৩৪টি রায় অনুবাদ করা হয়েছে। আরও কিছু রায়ের অনুবাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে খুব শিগগিরই এগুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনুবাদ কার্যক্রম থমকে আছে এটা সঠিক নয়। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, যে সফটওয়্যারটি আমরা ব্যবহার করছি, এটি অত্যন্ত কার্যকরী। এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। যত ব্যবহার করা হবে, তত এর কার্যকারিতা বাড়বে। তিনি আরও বলেন, ওয়েবসাইটে রায় পাওয়ার বিষয়টাতেই আমরা এখনো অভ্যস্ত নয়। তাই অনূদিত রায়ের বিষয়ে হয়তো আরও পিছিয়ে রয়েছি। তবে ভবিষ্যতে এটা আমাদের অনেক কাজে আসবে। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, রায় ও আদেশগুলো বাংলায় অনুবাদের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। উচ্চ আদালতের কিছু বিচারপতি বাংলায় রায় লেখা শুরু করেছেন। তবে অধিকাংশ বিচারপতিই ইংরেজিতে রায় দেন। এ ছাড়া আইনজীবীদেরও ইংরেজি থেকে বাংলায় টার্ন করা সময়সাপেক্ষ। তাই আমরা দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি মাধ্যমের অপেক্ষা করছিলাম। তবে এ উদ্যোগটি এখনো খুব একটা কাজে এসেছে বলে শুনিনি। তিনি বলেন, যে কোনোভাবে রায় ও আদেশ সাধারণ মানুষের বোধগম্য করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন বুঝতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সুপ্রিম কোর্ট দ্রুত সব সমস্যা সমাধান করবেন বলেই আশা করছি।

 

সর্বশেষ খবর