শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

সমমনাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের ফল শূন্য

ক্ষুব্ধ শরিকরা বলছেন ডামি নেতাদের দিয়ে বৈঠক করেছে বিএনপি

শফিউল আলম দোলন

সমমনাদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের ফল শূন্য

‘যুগপৎ আন্দোলনে শরিক সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে টানা দুই সপ্তাহ ‘ম্যারাথন’ বৈঠক করেছে বিএনপি। সেটি কার্যত  ফল শূন্য। শরিকরা বলছেন, বৈঠক অর্থহীন ও অন্তঃসারশূন্য। আন্দোলন কর্মসূচিসহ পরবর্তী করণীয়, কোনো বিষয়েই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি। এ ছাড়া বৈঠকে সমমনা দল ও জোটের শীর্ষনেতারা তাদের উত্থাপিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নেরই জবাব পাননি রাজপথের এই বৃহৎ বিরোধী দলটির কাছে। এতে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন শরিক দলের নেতারা। তারা বলছেন- বিএনপিতে কোনো স্বচ্ছতা নেই। লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করানো হয়েছে ‘ডামি নেতা’দের দিয়ে, দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যাদের তেমন কোনো ভূমিকাই নেই। সম্ভবত দলটির হাইকমান্ডের সঙ্গেও এদের কোনো যোগাযোগ নেই। সমমনা দল ও জোটগুলোর শীর্ষনেতাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।   

এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসলে আমরা বৈঠক করেও বিএনপির কাছ থেকে সঠিক কোনো জবাব পাচ্ছি না। তাদের স্বচ্ছতা নেই। আন্দোলনের তো নানা কৌশল থাকে। আমরা চাই সেটা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু বিএনপি সেটা পারছে না। আবার অনেক ভুল সিদ্ধান্তও আছে। এখন যদি বিএনপি সঠিক প্রক্রিয়ায় না আসে- তাহলে আমরা আমাদের মতো এগিয়ে যাব। আমাদের সেটা করা ছাড়া উপায় নেই। আসলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ভূমিকায় যারা আছেন, তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাদের মধ্যে নানা ধারা বিরাজ করছে। নির্বাচন হয়ে গেছে চার মাসের বেশি, তারা এখনো পর্যন্ত কিছুই করেননি। তারপরও দেখি কী হয়। তবে আমরা লিয়াজোঁ কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে আপাতত কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছি না।

জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপির নিজের দলের পক্ষ থেকে আন্দোলনের ব্যর্থতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোথাও কোনো ভুল আছে কি না, কী কারণে বা কাদের হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘ দুই বছরের ব্যাপক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বিজয়ের সম্ভাবনাময় এমন একটি আন্দোলন (২৮ অক্টোবর) মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে ভেস্তে গেল? এসব বিষয় চুলচেরা পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণপূর্বক একটি মূল্যায়ন করে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকে জানানোর কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের প্রায় পাঁচ মাস পার হতে চললেও এখনো পর্যন্ত বিএনপি সেটি করেনি। এগুলো না করেই দলটি লিয়াজোঁ কমিটির পক্ষ থেকে টানা দুই সপ্তাহ সময় নষ্ট করে ‘নামকাওয়াস্তে ও কার্যত অর্থহীন’ বৈঠকের আয়োজন করে। এসব বৈঠকে শরিক ও সমমনাদের পক্ষ থেকে ‘বিএনপি আগামী এক বছরে সত্যিই কি সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোনো আন্দোলন করতে চায় কি না’, সেটি জানতে চাওয়া হলে তারও কোনো জবাব দেয়নি দলটি। এ নিয়ে সমমনা দল ও জোটগুলোর ভিতরে ক্রমশ ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কথা ছিল ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি তাদের দলের কর্মকান্ডের ব্যাপারে একটি মূল্যায়ন দেবে। সম্ভাবনাময় আন্দোলন কেন ব্যর্থ হলো, কোথায় ভুল ছিল, কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল কি না, আত্মঘাতী কোনো সিদ্ধান্ত ছিল কি না- এসব বিষয় পর্যালোচনার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বিএনপি এখনো পর্যন্ত তাদের সেই মূল্যায়ন আমাদের জানায়নি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিবেচনায় কিছু সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী যা আমরা বিএনপিকে ইতোমধ্যে বলেছি। অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা ছিল- ভুল সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত ছিল হঠকারী। বিএনপি যে প্রক্রিয়ায় আন্দোলন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়- এটাকেও আমরা গণতান্ত্রিক মনে করছি না। আমরা বলেছি, যুগপৎ আন্দোলনের যত সিদ্ধান্ত হবে- তার সব লিয়াজোঁ কমিটিতে চূড়ান্ত হতে হবে।

আন্দোলনে শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, এখন নতুন করে একটি শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করা যায়- লিয়াজোঁ কমিটি হলে আন্দোলনের ব্যাপারে এই কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। আর যুগপৎ আন্দোলনে আরও কিছু দল যোগ দেবে। তার মধ্যে জামায়াতসহ আরও কিছু ইসলামী দল আছে। সবার সঙ্গে আলোচনা চলছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এবং দলের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির কোনো দূরত্ব তৈরি হয়নি। নির্বাচনের পরে আমাদের নেতা-কর্মীদের ঘুরে দাঁড়াতে একটু সময় লাগছে মাত্র। এ ছাড়া আগে ছিল নির্বাচন বর্জনের আন্দোলন। এখন তো জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন হবে। শরিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই এসব কর্মসূচি দেওয়া হয়। ভবিষ্যতেও তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেই কর্মসূচি দেওয়া হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের এক দফা দাবি অব্যাহত আছে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অচিরেই আমরা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিতে যাব ইনশাআল্লাহ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর