শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনায় সফল হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নতুন সরকারপ্রধানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের গোটা সমস্যার মূল হচ্ছে- গণতন্ত্রের অভাব। সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হচ্ছে তাঁর (ড. ইউনূস) অন্যতম প্রধান কাজ। যত দ্রুত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারবেন-ততই তিনি সাফল্য অর্জন করতে পারবেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পারভেজ রেজা কাঁকন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ তৎকালীন সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের হামলা ও গুলিতে গুরুতর আহত কয়েক শ মানুষ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস তো ছাত্রদের-আমাদের মনোনীত ব্যক্তি, যাকে আমরা গোটা জাতির পক্ষ থেকে এই দায়িত্ব দিয়েছি, তিনি এই দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে, তাঁর সফল নেতৃত্বে, তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সব সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী? জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রথমটা হচ্ছে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তার জন্য চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে, অতি দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক যে সরকার আছে সেখানে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তৃতীয়টি হচ্ছে, অর্থনীতি সচল রাখার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নিতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভয়াবহ যে দানবীয় সরকার, অত্যাচারী, হত্যাকারী সরকার তাদের পতন হয়েছে আমাদের ছাত্রদের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলসহ পেশাজীবীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীদের আমরা অভিবাদন জানাই। সেই সঙ্গে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আহতদের চিকিৎসার জন্য আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। আমাদের ড্যাবের চিকিৎসকরা কাজ করছেন, আমাদের ছাত্ররা কাজ করছেন।
দেশকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তকে প্রতিহত করতে হবে : গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইতোমধ্যে দুষ্কৃতকারীরা রাজধানীসহ দেশব্যাপী পরিকল্পিত অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ডাকাতি, হামলা, ভাঙচুর ও লুটতরাজে লিপ্ত হয়েছে। কয়েকটি জেলায় সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি, দোকানপাটে আক্রমণ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অনেককে ভয় দেখিয়ে বাড়ি ও এলাকাছাড়া করার মতো সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত দুষ্কৃতকারীদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আইনকে যাতে কেউ নিজ হাতে তুলে নিতে না পারে সেজন্য গণতন্ত্রকামী মানুষ সার্বিক সহায়তা প্রদান করবেন। দেশকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তকে প্রতিহত করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘদিনের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে মুক্ত নিঃশ্বাস নেওয়ার পরিবেশ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দুর্বার আন্দোলনে অভূতপূর্ব সাফল্যের ফলে দেশ আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত। বৈষম্যবিরোধী যৌক্তিক আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সাহস ও দৃঢ়তায় গণমানুষের বহু কাক্সিক্ষত প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বাস্তবায়নের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অর্জিত বিজয়কে সংহত করে দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যাতে আন্দোলনের অর্জিত বিজয়কে বিকৃত করতে না পারে সেদিকে গণতন্ত্রকামী মানুষকে সতর্ক থেকে একযোগে তা প্রতিহত করতে হবে। শান্তির সমাজ গড়তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে অঙ্গীকার সেটি সার্থক করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, সুযোগসন্ধানী অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে হবে, কেউ যাতে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে সম্পর্কে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে সাবধান থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মকারীরা যাতে পার পেতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক পাহারা দেওয়ার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। মির্জা ফখরুল বলেন, নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টাকারীদের সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। অপতৎপরতাকারীদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে সেটি তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করার জন্য এলাকাবাসী ও দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।