সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতন প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তানজিনা তাম্মিম হাপসা বলেছেন, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে হেরে যাওয়া মহল। তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তারা বিভিন্নভাবে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। আমরা এটা রুখে দিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।’ গতকাল বিকালে এক ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এখন চূড়ান্ত লক্ষ্য কী’ জানতে চাইলে তানজিনা তাম্মিম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এরই মধ্যে সরকারের জন্য একটি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিয়মান হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অসংগতিগুলোকে খতিয়ে দেখে সেগুলোকে সামনে নিয়ে আসতে এবং দেশ সংস্কারে ভূমিকা পালন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির প্রবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের জন্য আমরা ছাত্র সংসদ চাই। সেখানে দল-মত নির্বিশেষে গণতান্ত্রিক উপায়ে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা হবে। কোনো দলীয় দাসত্বে থাকবে না কেউ।
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পর শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক শিক্ষা, চর্চা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়- সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বই পড়ার চর্চাকে বেগবান করতে এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রকল্প লাইব্রেরি নামে একটি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হয়েছে। আমি তার প্রতিষ্ঠাকালীন একজন সদস্য। আমরা চায়ের আড্ডায় রাজনৈতিক আলাপকে নিয়ে এসে, পাঠচক্র করে, ছাত্র সংসদে সেটা বাস্তবায়ন করে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা এবং শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ আন্দোলনে অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের সদস্য এমন অনেক শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। সেখানে এই প্লাটফর্ম থেকে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দল ফর্ম করা সম্ভব নয়। কিন্তু এ আন্দোলন শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের রাজনীতি এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। ছাত্ররা দেশের রাজনীতিতে অবদান রাখার কথা ভাবছে। তাই এই আন্দোলনে কাজ করে আসা মানুষগুলোকে নিয়ে নতুন কোনো রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করার একটা সম্ভাবনা আছে। তবে সেটা এই আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে নয়।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মাঝে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির অংশগ্রহণ থাকায় এসব দল থেকে আসা রাজনৈতিক চাপ কীভাবে ঠেকানো হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দল-মত থেকে ব্যক্তিরা সমন্বয়ক কমিটিতে এলেও সবার উদ্দেশ্য এক। দেশের কল্যাণে, ছাত্রসমাজের কল্যাণে পরমতসহিষ্ণু হয়ে আমরা একে অপরের মতামত শোনার চর্চা করব। সবার কথা বলার জায়গা নিশ্চিতের মাধ্যমে আশাকরি সৌহার্দ বজায় থাকবে।’ চাঁদাবাজি দমনে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আমরা একে একে সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলব। সম্প্রতি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে হলের রুম দখল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অন্য ক্লাবের কার্যালয় দখলের চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সবসময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এই ব্যানারে এসব কর্মকান্ডে র ঘোষণা আমরা দিইনি। তাই আমরা এসব অনাকাক্সিক্ষত কর্মকান্ডে র ব্যাপারে অবহিত হলে সেটার ব্যাপারে অবশ্যই সোচ্চার হব।