দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নিতে চীন সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চূড়ান্ত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে দেশটির কার্যকরী ভূমিকা পালনের দাবি জানিয়েছে দলটি। গতকাল রাজধানীর মগবাজারে দলীয় কার্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। বৈঠক শেষে জামায়াতের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূত, পলিটিক্যাল প্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। কীভাবে বাংলাদেশ ও চীন আরও কাছাকাছি এসে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ উন্নয়নে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারি সে ব্যাপারে আলাপ হয়েছে। আমাদের দেশের উন্নয়নমূলক কাজে বড় পার্টনার হচ্ছে চীন। আমরা আশা করছি আগামীতেও বাংলাদেশের উন্নয়নে আরও বেশি বিনিয়োগ করবে দেশটি। জামায়াত আমির বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা অনুরোধ করেছি, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীন কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। চীন যদি কার্যকরী পদক্ষেপ বা ভূমিকা পালন করে তাহলে রোহিঙ্গা সংকটের সমস্যার সমাধান হবে। এদিকে জামায়াতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, আজকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে খুবই সফল একটি মতবিনিময় করেছি। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ এখানে দলটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্কোন্নয়ন, উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে কথা হয়েছে।
বাংলাদেশ একটা বৈষম্যহীন দেশে পরিণত হোক : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমার যদি বাড়িতে পাহারা না লাগে, আমার মসজিদে যদি পাহারার প্রয়োজন না হয় তাহলে হিন্দু ভাইদের মন্দিরে পাহারার প্রয়োজন হবে কেন? আমরা এ ধরনের বৈষম্য চাই না। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করে গেছে এর মাধ্যমে সব বৈষম্যের কবর রচনা হোক। জামায়াত আমির বলেন, আমরা এমন একটা দেশ চাই, যে দেশে সব ধর্মের মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। এ দেশের নাগরিক হিসেবে দেশে ও প্রবাসে যেখানেই যাক গর্বের সঙ্গে বলবে আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। এখানে বিশেষ বিশেষ সময়ে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। কারণ এখানে জন্মগতভাবে সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ একটা বৈষম্যবিহীন দেশে পরিণত হোক। আমাদের নিয়ে যেন গর্ব করতে পারে এমন একটা জাতি আমরা চাই। গতকাল সকাল ১০টায় দিনাজপুর ইনস্টিটিউট মাঠে জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর উত্তর জেলা শাখা আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এ আন্দোলন কোনো গোষ্ঠী বা দলের নয়, এ আন্দোলন আপামর জনগণের। জনগণ রাস্তায় নেমে এসে আন্দোলন সফল করেছে। এখানে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের লোকেরা শুধু লড়াই করেনি। কেউ যদি এ আন্দোলন নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায় তাহলে দেশের ১৮ কোটি মানুষ রুখে দেবে। হাজারো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ বিপ্লব, এ পরিবর্তন, এ আন্দোলনের সফলতা অবশ্যই আমরা পাহারাদারি করব।
দিনাজপুর উত্তর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মো. আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল ও জাগপার কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান। সমাবেশে জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আফতাব উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর দক্ষিণ জেলা আমির মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও জেলা আমির মাওলানা আবদুল হাকিম, পঞ্চগড় জেলা আমির মাওলানা ইকবাল হোসাইন, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোকাররম হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি মাওলানা সোহরাব হোসাইন, দিনাজপুর শহর জামায়াতের আমির মো. রেজাউল ইসলাম, শহর ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক, দিনাজপুর উত্তর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রেজাউল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।