বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, সমাজের প্রতিটি স্তরে ক্যান্সার তৈরি হয়েছে। এটি যতদ্রুত সম্ভব নির্মূল করে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার গঠন করতে হবে। এজন্য আমাদের দুটি কাজ করতে হবে। প্রথমত আমাদের ধৈর্য ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক আদর্শ, দলাদলি, মুখোমুখি হওয়ার ট্রেডিশন ও কালচার থেকে কিছু সময়ের জন্য বিরত থেকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সোমবার বিকালে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, আমাদের ছাত্র-জনতাকে মনে রাখতে হবে- আমরা কোনো অথরিটি নয়- প্রেসার গ্রুপ। দেশ সংস্কারে আমরা যেসব কাজ করব, তা যেন আইন মেনে করি। আইনের বাইরে গিয়ে আমাদের কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সব জায়গায় অংশগ্রহণ থাকবে। কিন্তু পড়াশোনা করতে হবে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ বাংলাদেশে কাজ করে প্রতি মাসে লাখো কোটি ডলার বেতন হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে। সেসব পদের জন্য আমাদের নিজেদের তৈরি করতে হবে। সারজিস বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন চলেছে। বিগত সময় অনেক দল হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সফল হয়নি। সাধারণ মানুষ হাসিনা সরকারের কাছে জিম্মি ছিল। তাই দ্বিতীয় স্বাধীনতার জন্য মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আবু সাঈদ তার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বলেই আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। এভাবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে। তিনি বলেন, হাসিনা ও তার কিছু রাজনৈতিক নেতা-কর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। দোসররা এখনো আছে। তারা আমাদের মাঝে বিভেদ তৈরি করবে। তাই যতদিন পর্যন্ত না দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার আসছে ততদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। রংপুর বিভাগের সঙ্গে বৈষম্য নিয়ে সারজিস বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা ঝুলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ১ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন ছিল। অথচ পদ্মা সেতু ও রেল সেতু তৈরির জন্য হাসিনা সরকার ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। তিস্তা পাড়ের কোটি মানুষের জন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে পারেনি। দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেই বরাদ্দ পুরো রংপুর বিভাগে দেওয়া হয়নি। আমরা বৈষম্যমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে সীমান্তে গুলি চালানো হয়েছে। আমার ভাই-বোনদের লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকত। এরপরও শেখ হাসিনা সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। হাসিনা সরকার ভারতকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল। আগামীতে ভারতের আধিপত্য মেনে নেওয়া হবে না। রংপুর বিভাগীয় দলের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাঈদ লিয়ন বলেন, জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। গণহত্যার বিচারের পর যদি তারা পারে তখন রাজনীতি করবে।
আলোচনা শেষে ছাত্র-জনতার নানা প্রশ্নের উত্তর দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টায় ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, জাতীয় সংগীত ও জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় রংপুরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।