স্বাধীনতাকামী হিজবুল্লাহ গেরিলারা গতকাল ভোরে ইসরায়েলের ওপর একযোগে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এসঙ্গে তারা ব্যবহার করেছে রকেট সজ্জিত ড্রোনও। রাডারকে ফাঁকি দিয়ে এই ড্রোনের একটি আঘাত হেনেছে খোদ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারি বাসভবনে। ড্রোনের আঘাতে ভবনটি ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। তবে প্রধানমন্ত্রীসহ পরিবারের কেউ ওই সময় ভবনে না থাকায় তারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।
সূত্র : আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল, এএফপি।
খবরে বলা হয়, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলি ভূখন্ডে গতকাল ভোরের দিকে শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে হিজবুল্লাহ গেরিলারা। এর একটি ইসরায়েলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর সিজারিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে নেতানিয়াহুর বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোনের এই আঘাত ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। যদিও ড্রোন হামলার সময় ওই বাসভবনে নেতানিয়াহু কিংবা তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের কেউই ছিলেন না। ভোরের দিকে এই হামলা হয়েছে বলে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে। আইডিএফ বলেছে, ভবন লক্ষ্য করে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তিনটি ড্রোন ছোড়া হয়। এর মধ্যে একটি ড্রোন সিজারিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আঘাত হেনেছে এবং গুলি চালিয়ে দুটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের পোস্ট করা ছবি ও ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ড্রোনের আঘাতের পর আগুন জ্বলতে ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ফুটেজে দেখা যায়, ড্রোনটি প্রধানমন্ত্রীর ভবন অভিমুখে যখন ছুটে আসছিল তখন তার পেছনে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অ্যাটাক হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান ছুটছে। কিন্তু ড্রোনটি মুহূর্তেই নেতানিয়াহুর বাসভবনে আঘাত হানে। এ সময় সেখানে প্রচুর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। প্রচ- বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে আশপাশের এলাকা। সিজারিয়ার একজন বাসিন্দা স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল-টুয়েলভকে বলেন, ‘আমরা আকাশে উড়োজাহাজ উড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পেলাম। তখন কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু কোনো সাইরেনের শব্দ পাওয়া যায়নি। যে কারণে আমরা খুব বেশি চিন্তিত ছিলাম না। কিন্তু তারপর হঠাৎ একটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল। কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এমন বাস্তব ঘটনা ঘটেছে।’ তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তবে সৌভাগ্যবশত সেখানে কোনো হতাহত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কীভাবে ফাঁকি দিয়ে হিজবুল্লাহর ড্রোন নেতানিয়াহুর বাসভবনে আঘাত হানল, তা ইসরায়েলি বাহিনীকে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংঘাত শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে নেতানিয়াহুর বাসভবনে এই হামলাকে।
আরেক খবরে বলা হয়, ড্রোন হামলার পাশাপাশি হিজবুল্লাহ শুক্রবার রাতে এবং গতকাল সকালে উত্তর ইসরায়েলের একাধিক শহরে শত শত রকেট ছুড়েছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, লেবানন থেকে ইসরায়েলে অন্তত ১১৫টি প্রোজেক্টাইল ছোড়া হয়েছে।
অন্যদিকে লেবাননের হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা শুক্রবার ইসরায়েলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত দেশটির একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। হিজবুল্লাহর সাবেক প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহর হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা কেন্দ্রীয় ইসরায়েলের হাদেরার শহরের পূর্বে অবস্থিত একটি বিমান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঘাঁটিতে বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে। লেবাননের বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা এবং হাসান নাসরুল্লাহকে উৎসর্গ করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।