বাংলাদেশ আগামী দুই বছরের জন্য অর্থনৈতিক তিনটি ঝুঁকিতে রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য। এ তিন দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশে চরম অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বৈশ্বিক ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সূচকে নাজুক অবস্থায় পড়া বাংলাদেশকে টেনে তুলতে ‘রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন’ গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারের আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ সংস্কার : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এজেন্ডা’ শীর্ষক একটি সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব কথা বলেন। সংলাপে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক লুৎফে সিদ্দিকী প্রধান অতিথি ছিলেন। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। উপস্থিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি জাভেদ আখতার, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলী শামীম এহসান, ডিসিসিআইর সভাপতি আশরাফ আহমেদ ও বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন সব সমস্যার মূল হিসেবে দাবি করে রাজনীতির সংস্কারের তাগিদ দেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কার চাওয়া ভুল। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী দুই বছরের জন্য সামাজিক ঝুঁকি বিবেচনায় তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে রয়েছে, বেকারত্ব, জ্বালানি ঘাটতি, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস রোগের প্রাদুর্ভাব অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা এবং সামজিক অবক্ষয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ডুয়িং বিজনেস সূচকে ১৭টি সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে- দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, নীতির অস্থিতিশীলতা, দুর্বল শ্রমশক্তি, শিক্ষিত শ্রমশক্তির অপ্রতুলতা, উচ্চ কর হার, ট্যাক্স প্রবিধানের জটিলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরাধ এবং চুরি, উদ্ভাবনের অপর্যাপ্ত ক্ষমতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঝুঁকিপূর্ণ জনস্বাস্থ্য এবং শ্রমনীতির সীমাবদ্ধতা। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা মনে করি, দুর্নীতি সর্বদাই প্রধান সমস্যা। যদিও অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর সমস্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। বছরের পর বছর ধরে অদক্ষ আমলাতন্ত্র একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুক্ত আলোচনায় বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, সব অনিষ্টের মূলে রয়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতি দূর করা গেলে সব অনিয়মকে থামানো যাবে। এ জন্য আগে দুর্নীতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, রপ্তানিকরণে পিএসআইয়ের (প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন) জন্য ঘুষ দিতে হয়। এই ঘুষ কমানোর জন্য আবার ঘুষ দেওয়া লাগে। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের লক্ষ্য থেকে সরকার সরে আসছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রয়োজনে বিজনেস রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন গঠন করা হবে। সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত স্বার্থের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা সরকারের কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছি। আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’