বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেকেই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের বলব আপনাদের উচিত রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসা। চব্বিশের নতুন বাংলাদেশে তরুণ ছাত্র-জনতা আপনাদের আর চায় না। গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে এগ্রিকালচারিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ আয়োজিত জাতীয় কৃষিবিদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এগ্রিকালচারিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশের (এএফবি) সভাপতি ড. এ টি এম মাহবুব ই ইলাহি (তওহিদ)। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এগ্রিকালচারিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশের মহাসচিব কৃষিবিদি মুহাম্মদ মাসউদ, সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী ড. মোশাররফ হোসেনসহ আরও অনেকে।
জামায়াত আমির বলেন, রাজনীতির নামে নিজেদের আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত ব্যক্তিদের রাজনীতি ছাড়তে হবে। রাজনীতি করার জন্য রাজকীয় মন দরকার, ভিখারির মন নয়। নোংরা চিন্তা যারা করেন তাদের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মেধার জেনোসাইড করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয়েছে। এ দেশকে খুন-গুম-ধর্ষণের চারণভূমিতে পরিণত করা হয়েছিল।
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই। এই কাজ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-রুকনরা একা করতে পারবে না। এ জন্য দরকার জনগণের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা।’ জনগণকে হৃদয়ে ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি কর্মীদের বৈষম্যহীন চরিত্র গড়ে তুলতে বলেন। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গতকাল দুপুরে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা জেলা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতের আমির বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও তাঁর ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে বসিয়ে রাখা দোসরদের কাজে লাগিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন। স্বেরাচারী হাসিনার ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের ওপর যে রকম জুলুম করা হয়েছে বাংলাদেশের অন্য কোনো দলের ওপর সে জুলুম করা হয়নি।
কিন্তু আমরা আগেই বলেছি আমরা কারও ওপর প্রতিশোধ নেব না। আমরা বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার থেকে সবাইকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘স্বৈরাচারের পরিণতি দেখে আমি এবং আমরা সবাই যেন শিক্ষা নিই। যে-ই এ পথে হাঁটবে, তাদের জন্য ধ্বংস ও অপমান অনিবার্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি- হাতে ইট নিয়ে সাত-আট বছরের শিশু পথে নেমে এসেছিল। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কেন নেমে এসেছে? সে বলেছিল, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নেমে এসেছি। আমার ভাইদের তারা গুলি করে হত্যা করেছে। গুলি করে হত্যা করা হলে আমি শহীদ হয়ে যাব। মা-বাবাকে বলে এসেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি শহীদ হয়ে গেলে শহীদের সাথে দাফন করে দেবে। সাত-আট বছরের শিশু স্বৈরাচারকে চিনতে পারল, তারা নিজেদের চিনতে পারল না। জালিম সরকার জামায়াতে ইসলামীর ১১ জন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছে। শাপলা চত্বরে হাজার হাজার আলেম-ওলামাকে হত্যা করেছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গণহত্যা চালিয়েছে।’ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা জেলা আমির মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা অঞ্চল (দক্ষিণ) পরিচালক সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ অন্য নেতারা।