ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবারও যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা দাবিতে এবারের আন্দোলন কর্মসূচি দেবে দলটি।
এ লক্ষ্যে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে আলোচনা শেষে আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। তার আগে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যে এক দফায় আন্দোলন করছিলাম, এটা জুলাই মাসের শেষের দিকে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে এক দফা ঘোষণা করা হলো। আমরা শুরু করেছি অনেক আগে।’ তিনি বলেন, এক দফার মূল কথাই ছিল যে ফ্যাসিবাদের পতন এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা মানে হলো, দেশে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা। আর গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা হয় একটি নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। কিন্তু অতিসম্প্রতি অনেকে অনেক কথা বলা শুরু করেছেন। অন্যান্য কিছু নির্বাচনের কথা আলোচনা হচ্ছে। এটা গোটা জাতির আকাক্সক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা লিয়াজোঁ কমিটির পক্ষ থেকে সমমনা দল, জোটসহ নানা স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাদের মতামত জানার চেষ্টা করছি। তারা কী চান, সেটা জানতে চাচ্ছি। এসব জানার পর দলের স্থায়ী কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, শিল্পকারখানার উৎপাদন, ব্যবসাবাণিজ্যসহ সমগ্র দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্য যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন। এটা এখন সমগ্র দেশের সর্বস্তরের গণতন্ত্রকামী মানুষের দাবি। সে নির্বাচনে যাঁরাই নির্বাচিত হয়ে আসবে, তাঁরাই সরকার গঠন করবে। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সরকার না আসা পর্যন্ত দেশে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা আসবে না। এসব বিষয় নিয়েই আমরা লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে আলাপ-আলোচনা করছি। প্রয়োজনে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়েও মতামত আসছে। এটা সময়মতো জানানো হবে।’ গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে গত শনিবার আমাদের আলোচনা হয়েছে। আবারও আলোচনা হবে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী হয়।’ জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার এ বিষয়ে বলেন, যুগপৎভাবে কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যেই তা ঘোষণা হতে পারে। জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি ইস্যুতে এবারের কর্মসূচি দেওয়া হবে। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের দাবিগুলো মেনে না নেয় তাহলে মিছিল, মিটিং, লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই জরুরি সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার পর যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। সরকার যদি এটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা আরও জোরদার করব। আমরা বর্তমান সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি। আশা করি, এই সরকার ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের মতো ক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকবে না।’ গতকাল রাতেও বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায়, পতিত ফ্যাসিস্টদের গ্রেপ্তার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোট নতুন করে কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভা, সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দেওয়া হবে। বিদ্যমান ঐক্য ধরে রাখাসহ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচনের পর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্য নিয়েই সামনে এগোচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটির লিয়াজোঁ কমিটি সমমনা দল ও রাজনৈতিক জোটগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘৫ আগস্ট আমাদের যে বিজয়, সেই বিজয় বিভিন্নভাবে আজ বিপদগ্রস্ত হতে চলেছে। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিবাদবিরোধী যে ঐক্য, সেই ঐক্য কিছুটা হলেও হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের ঐক্যে কোথায় যেন একটু চিড় ধরেছে। আমরা এর সমাধান করতে চাই। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সর্বদলীয়ভাবে, জুলাই-আগস্ট যেভাবে আন্দোলন করেছি, ঠিক তেমনিভাবে একত্রে থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’