সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ব্যানারে একদল বিক্ষোভকারী রাজধানীতে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল শিক্ষা ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিপেটা করে পুলিশ। তখন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পুলিশের লাঠিচার্জে ছয় শিক্ষার্থী, এক পথচারীসহ সাতজন আহত হয়েছেন। পরে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নেতা-কর্মীরা। ক্যাম্পাস এলাকায় পুলিশি হামলার জবাব চাইতে গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে যান তাঁরা। আহত ব্যক্তিরা হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইভান তাহসিব (২৩), ঢাবির জাহিদুল ইসলাম রিয়াদ (২২) ও নেবলা তাসফিয়া তাবাসুম (২২), নর্দান ইউনিভার্সিটির মারুক হাসান (২০), ঢাকা কলেজের তৈয়ব ইসলাম (২৪), সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পঙ্কজ নাথ সূর্য (৩০) ও পথচারী বাবুল (৪৮)।
ঢামেকে আহত ইভান তাহসিব জানান, বুধবার পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তাঁরা বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ব্যানারে রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় শিক্ষা ভবনের সামনে পুলিশ মিছিলের ওপর অতর্কিতে লাঠিচার্জ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন এবং সেখান থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষা ভবনের সামনে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পুলিশ আগে থেকেই শিক্ষা ভবনের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। বিক্ষোভকারীরা ওই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে জলকামান, টিয়ার শেল ব্যবহার করে। এ সময় পুলিশ দুটি সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করে। সেখানে কয়েক মিনিট ধরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বিক্ষোভকারীরা দোয়েল চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দিকে সরে যান। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁদের দাবির সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমাদের উদ্দেশ্য তাঁদের মারা নয়। আমরা শুধু তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। আমরা আজ তাঁদের সবাই মিলে সচিবালয়ে না গিয়ে বরং কয়েকজনের একটি প্রতিনিধিদলকে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা আমাদের সে পরামর্শ শোনেননি। পরে আমরা তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দিই।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেত্রী ও ইডেন কলেজের ছাত্রী জয়মা মুনমুন বলেন, ‘বুধবারের হামলার প্রতিবাদে এবং জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছিলাম। তখন তারা আমাদের ওপর দফায় দফায় লাঠিপেটা করেছে। জলকামান ব্যবহার করেছে, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। হামলায় ছয় থেকে সাতজন আহত হয়েছেন। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা এই হামলার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ মিছিল করব।’
ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, “আমরা ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার জবাব চাইতে প্রক্টর অফিসে মিছিল নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা দবি জানিয়েছি, হামলার সঙ্গে জড়িত ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির’ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।” জানা যায়, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর গতকাল বেলা সোয়া একটায় শিক্ষা ভবন এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী শব্দসংবলিত গ্রাফিতি রাখা ও না রাখা নিয়ে বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’-এর মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটে।
এদিকে এনটিসিবি ভবনের সামনে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে এ হামলার তদন্তের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এদিকে একই ঘটনার নিন্দা ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু এলাকা থেকে বের হয়ে ভিসি চত্বর ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ৫ আগস্ট-পূর্ববর্তী সময়ে সারা দেশে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা খুন, গুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এসব ভুলে গিয়ে কোনো ক্রেডিট না নিয়ে একটি সুন্দর সাবলীল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু একদল গণতন্ত্রকামী শিক্ষার্থীদের ওপর আরেক দল যখন সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করল তখন পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল।