বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তথা উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই ১০০টিরও বেশি পণ্যের ওপর ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে এবং কিছু পণ্যের কর অব্যাহতি তুলে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পোশাক, ওষুধ এবং মোবাইল ইন্টারনেট সেবা। এ সিদ্ধান্তটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলবে, চাপ বাড়াবে। রাজধানীর গুলশানে গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির প্রথম ধাপের ৪২ হাজার কোটি টাকা এবং পরবর্তী সম্ভাব্য ঘাটতি মেটাতে এবং ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও শর্ত পূরণ করে আইএমএফের ঋণের জন্য এ ভ্যাট বাড়িয়েছে। বর্তমান রাজস্ব দিয়ে সরকার বাজেটের খরচ মেটাতে পারছে না। কিছুদিন আগে সরকার সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছে কিছু লুণ্ঠিত ব্যাংকের তারল্য সংকট মোকাবিলায়। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বুঝতে পারি আওয়ামী ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী সময়ে অন্যান্য খাতের মতো আর্থিক খাতেও বিশৃঙ্খলা ও ভঙ্গুর অবস্থা পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো সৃষ্টি করেছে। তথাপি অন্তর্বর্তী সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ জনগণের জীবনের ওপর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি। তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জগুলোকে কার্যকর উপায়ে মোকাবিলা না করে এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ভিত্তি তৈরির দিকে মনোযোগ না দিয়ে চলতি অর্থবছরের মাঝপথে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়াল, যা সহজ; কিন্তু জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আগেও বলেছি- অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাব। তাই অনুরোধ করছি, নীতিমালা প্রণয়নে জনগণের কথা সর্বপ্রথম বিবেচনায় নিন। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রাজস্ব সংগ্রহের জন্য অন্যান্য উপায় বিবেচনা করার এবং সে অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিন। পরোক্ষ কর সব শ্রেণির মানুষকে প্রায় সমানভাবে প্রভাবিত করে এবং নিম্নবিত্ত মানুষের ওপর বোঝা বাড়ায়। প্রত্যক্ষ কর না বাড়িয়েও সরকারি খরচ কমিয়ে এবং চলতি বাজেটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পুনর্বিন্যাস করেও চলমান আর্থিক সমস্যার সমাধান করা যায়। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে কালো টাকা উদ্ধারের জোরালো চেষ্টা করা, ব্যাংকের লুণ্ঠিত টাকা এবং নন-পারফরম্যান্স লোনের টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বর্তমান সরকারের শ্বেতপত্র অনুযায়ী, দুর্নীতি ও লুটপাটের প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকা উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা অতীব জরুরি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান ভ্যাট ও রাজস্ব প্রশাসনে পতিত সরকারের দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। আগের মতো রাজস্ব প্রশাসন কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে।
‘ঋণখেলাপিদের মনোনয়ন দেবে না বিএনপি’ : রাজধানীর আগারগাঁওয়ে গতকাল বিআইসিসি কার্নিভাল হলে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি আয়োজিত ‘শ্বেতপত্র এবং অতঃপর : অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামের শেষ অধিবেশনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঋণখেলাপিরা যেন মনোনয়ন না পান বিএনপি তা খেয়াল রাখবে উল্লেখ করে বলেন, যারা দেশে অবদান রাখেন কিন্তু ভোটে আসেন না, জনগণের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের পার্লামেন্টে আনতে চায় বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কারকে অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক এ দুভাবেই দেখে বিএনপি। এর মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দেবে দলটি। তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে সংস্কার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় দ্রুত নির্বাচন দাবিকে রাজনৈতিক কৌশল মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংস্কার দরকার আছে, তবে দ্রুত নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হবে। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের পর নির্বাচিত দলসহ জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবাই সত্যিকার সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চান, তবে এটা রাজনৈতিক কাঠামোতে আনতে না পারলে তা বাস্তবে সম্ভব হবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না সে বিষয়ে দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অধিবেশনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান।