বিশ্বে বন্দর পরিচালনাকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড বঙ্গোপসাগরের উপকূলে নতুন সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বন্দর সেবাদানকারী আরেক প্রতিষ্ঠান এপি মোলার-মায়েস্ক চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এদিকে ফেসবুক বাংলাদেশে ফ্যাক্ট-চেকিং এবং ডিজিটাল যাচাইকরণ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গতকাল সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পৃথক বৈঠকে এই আগ্রহ ও প্রস্তাব উঠে আসে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল রাতে এ তথ্য জানায়। ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও দক্ষ করে তুলতে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে আরও বন্দর তৈরির প্রস্তাব দেন। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে জট কমাতে নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালেও বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন তিনি। সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, তারা ২০২২ সালে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তৎকালীন সরকার তাদের অগ্রাহ্য করেছে। তিনি বলেন, ‘তারা চট্টগ্রাম বন্দরে একটি ডিজিটাল অনলাইন শুল্ক পদ্ধতি চালু করতে চান, যা দুর্নীতি ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশে ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোতেও বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। ডেনিশ কোম্পানি এপি মোলার-মায়েস্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মায়েস্ক উগলা চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে অবস্থিত লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন। রবার্ট মায়েস্ক উগলা বলেন, তারা মরক্কো এবং ওমানেও একই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। তাদের বিনিয়োগের মাধ্যমে ওমানের সালালাহ বন্দর বিশ্বের সেরা বন্দরগুলোর মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং এপি মোলার-মায়েস্ক কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে আমাদের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য বঙ্গোপসাগরের উপকূলে আমাদের একাধিক বন্দর নির্মাণ করতে হবে।’ চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে এটি উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্য এবং নেপাল ও ভুটানসহ অন্যদের জন্য কন্টেইনার পরিবহনে একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
মেটার বৈশ্বিক প্রধানের বৈঠক : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জবাবে ফেসবুকের মাতৃ সংগঠন মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রধান স্যার নিক ক্লেগ বলেন, ফেসবুক বাংলাদেশে ফ্যাক্ট-চেকিং এবং ডিজিটাল যাচাইকরণ অব্যাহত রাখবে। কারণ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এর জনসংখ্যা বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম। তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাক্ট-চেকিং বন্ধ করার মেটার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ এবং ইউরোপের দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে না। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভার ফাঁকে মেটার বৈশ্বিক বিষয়ক প্রধান স্যার নিক ক্লেগ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সঙ্গে যুক্ত অভিজাত ব্যক্তি এবং রাজনীতিবিদরা তার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। এরাই এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা এবং ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিশ্বব্যাংকের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত : গতকাল বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভার ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনা বিজার্দে। এ সময় বাংলাদেশের পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান করতে চায় তাঁর সংস্থা।
শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল মিথ্যা : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে দেশের যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছিল, তা ছিল মিথ্যা। এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন না তোলার জন্য পুরো বিশ্বকে দায়ী করেছেন তিনি। গতকাল সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) বলতেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি হার সবার চেয়ে এগিয়ে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রবৃদ্ধি।
তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির হার নয়, বরং সমাজের সর্বনিম্ন স্তরের মানুষের জীবনমান উন্নত করাই আমার লক্ষ্য।
এই কঠিন সময়ে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে ড. ইউনূস বলেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে টানাপড়েনের সম্পর্ক ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না এঁকে আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না। বাংলাদেশের স্থল সীমানার প্রায় পুরোটাই ভারতের সঙ্গে।