আওয়ামী লীগের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করলে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রেস সচিব বলেন, আমাদের দিক থেকে কড়া বার্তা রয়েছে, যারা পতিত সরকারের পক্ষে কর্মসূচি পালন করবে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের লিফলেটে যেসব লেখা রয়েছে সেগুলো খুবই আপত্তিকর। তাই যারা এসব লিফলেট বিতরণ করবে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রমজানকে সামনে রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য সামাল দিতে সরকারের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠক ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনের বিষয়ে পুলিশি রিপোর্ট সম্পর্কে জানাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মেদ ও সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।
প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব বলেন, ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ২৩ জনের মৃত্যু নিয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যে প্রতিবেদন দিয়েছে তার মধ্যে ২২টি মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত করেছে পুলিশ। এসব মৃত্যুর একটিও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ছিল না। সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এটি রাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক। প্রেস সচিব বলেন, এর সঙ্গে বাংলাদেশের ইমেজ জড়িত। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়টি জড়িত। যদি কেউ প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে এই ঘটনাগুলো (সংখ্যালঘু নির্যাতন) ঘটছে, তাহলে এমন হতে পারে যে এরাই আবার পার্লামেন্টে মোশন নেবে স্যাংশন আরোপের জন্য।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বড় ধরনের গুজব ছড়ানোর জন্য ভারতের গণমাধ্যমকে দায়ী করে শফিকুল আলম আরও বলেন, ইন্ডিয়ান মিডিয়া আমাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ওয়ারে নেমেছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে কম হত্যাকা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
রমজানে আইনশৃঙ্খল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানানো হয় প্রেস ব্রিফিংয়ে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, জুলাই বিপ্লবে আহতদের সুচিকিৎসায় বিষয়ে সরকার সহানুভূতিশীল। তার পরও চিকিৎসা নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশা আছে। আমরা ৩০ জনকে বিদেশ পাঠিয়েছি। একজনের জন্য ৬ কোটি টাকাও খরচ হয়েছে।
তিতুমীর কলেজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যই সরকারের বক্তব্য। মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে সরকার সচেতন আছে। তারা যেন জন দুর্ভোগের বিষয়ে সচেবতন থাকে সেটার জন্য আমরাও প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আহ্বান জানাই।
সংখ্যালঘু হত্যাকাণ্ডের নিয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে আরও বেশি বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, যে ২২টি ঘটনার বিস্তারিত ইতোমধ্যে জানা গেছে, তার মধ্যে একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, এই তালিকায় এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে মারা যান।
তিনি বলেন, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের সংহিসতাকেই সমর্থন করে না। একই সঙ্গে এই ধরনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচারকে উদ্বেগজনক বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার।